নোবেল পুরস্কারে মনোনীত বাংলাদেশের ডা. আবিদ
প্রকাশিত : ১৬:৩২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি-মার্কিনি চিকিৎসক অধ্যাপক রুহুল আবিদ। ২০২০ সালের শান্তি পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনয়ন দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস বস্টন। ডা. রুহুল আবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলপার্ট মেডিকেল স্কুলের একজন অধ্যাপক।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস বস্টনের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জ্যঁ ফিলিপে বিলিউ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ডা. রুহুল আবিদ ‘হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে শান্তি পুরস্কারের যৌথভাবে মনোনয়ন পেয়েছে তার এই সংস্থাটিও।
অধ্যাপক ডা. রুহুল আবিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক শেষে জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিক্যুলার বায়োলজি অ্যান্ড বায়োকেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করেন। ২০০১ সালে তিনি হার্ভাড মেডিকেল স্কুল থেকে ফেলোশিপ করেন। তিনি ব্রাউন গ্লোবাল হেলথ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী ফ্যাকাল্টি মেম্বার।
ডা. রুহুল আবিদ পরিচালিত ‘হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল’ সংস্থাটি বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০ হাজার পোশাক শ্রমিককে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। এছাড়াও সংস্থাটি প্রায় নয় হাজার সুবিধাবঞ্চিত নারী ও পোশাক শ্রমিকের জরায়ু ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা সেবা এবং কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে।
তিনি ২০১৩ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ডা. রোজমেরি দুদার সঙ্গে ঢাকা, গাজীপুর ও শ্রীপুরের তিনটি কারখানায় পোশাক শ্রমিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা, যক্ষ্মা ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থার মতো দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা ও রোগের ঝুঁকির মধ্যে আছেন কিনা তা যাচাই করা হয়। এই রোগগুলোর উপর মনোযোগী হয়েই হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হায়েফা) তাদের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এ বছর এপ্রিলে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা প্রজেক্ট হোপের সঙ্গে একটি সহযোগিতামূলক কার্যক্রম শুরু করে হায়েফা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ জুড়ে বড় বড় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি বিশ্বমানের চার দিনের কোভিড-১৯ দক্ষতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডা. আবিদ ও হায়েফা ৩৫টি সংস্থার প্রায় এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করেছে। এছাড়া বর্তমানে চলমান করোনাভাইরাসের সঙ্কটে মানুষকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ‘হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল’। পাশাপাশি করোনার মধ্যে হওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরও সেবা দিয়েছে এই সংস্থাটি। তার নোবেল মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো দারুণ ভূমিকা রেখেছে।
ডা. আবিদ তার প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের জন্য কোনো বেতন বা পারিতোষিক নেন না। ডা. আবিদ এবং তার সংস্থা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ২০১৮ সালে গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জস কানাডার ‘স্টারস ইন গ্লোবাল হেলথ’ পুরষ্কার পায়।
জানা গেছে, ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন ২১১ জন। এর মধ্যে একজন হলেন ডা. রুহুল আবিদ এবং এবং তার পরিচালিত সংস্থা। এই মনোনীতদের মধ্য থেকে আগামী অক্টোবরে বিজয়ী ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি।
এএইচ/এমবি
আরও পড়ুন