‘৭২ এর সংবিধানের ভিত্তিতেই সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হবে: স্পিকার
প্রকাশিত : ২২:৫৩, ১৫ নভেম্বর ২০২০
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুর দর্শন ধারণ করে তাঁর হাতে রচিত ১৯৭২ এর সংবিধানের ভিত্তিতেই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির আদর্শ, কর্ম, সংগ্রাম, ত্যাগ, আর বিশাল অর্জন মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশের সংবিধান। এ সংবিধানের সুফল জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
রোববার (১৫ নভেম্বর) সংসদে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী-মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন, কর্ম, আদর্শ, দর্শনের ওপর সাধারণ আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ নভেম্বর সংসদ কার্যপ্রনালী বিধির ১৪৭ ধারায় জাতির পিতার জীবন, কর্ম, আদর্শ, দর্শনের ওপর আলোচনা করে এ মহান নেতার প্রতি জাতির পক্ষ থেকে সংসদে বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এ প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। তিনি আজও সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন।
এর আগে আজ সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুর হয়। অধিবেশনের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা শুরু করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে প্রেসিডেন্সিয়াল বক্সে বসে আলোচনা প্রত্যক্ষ করেন।
অন্যান্যের মধ্যে আজ আলোচনায় অংশ নেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, চিফ হুইপ নূর-ই- আলম চৌধুরী, সরকারি দলের সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক, অধ্যাপক আলী আশরাফ, বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ।
আলোচনায় তিনি বলেন, সংবিধানকে সুরক্ষিত ও সমন্বিত রাখার ক্ষেত্রে সবাইকে সদা জাগ্রত ও সচেতন থাকতে হবে। মুজিববর্ষে সংবিধানের সুফল বাংলার সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করতে হবে।
স্পিকার বলেন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের অভিপ্রায় পরম অভিব্যক্তি এই সংবিধান। ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল প্রতিপাদ্য “ভবিষ্যৎ বংশধররা যদি সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে আমার জীবন স্বার্থক হবে, শহীদদের রক্তদান স্বার্থক হবে।”
তিনি বলেন, জাতির পিতার বক্তব্যের এই মর্মকথা সবাইকে উপলবদ্ধি করতে হবে। সংবিধানের মূল প্রতিপাদ্য স্মরণ রাখতে হবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে হবে। এই সংবিধানকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করার দায়িত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ দেশপর জনগণ, ভবিষ্যৎ বংশধরদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরই ন্যস্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ধারণ করে এই সংবিধান যেন বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের মধ্য দিয়ে অর্থবহ হয়। সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে হবে। এই সংবিধান তখনই স্বার্থক হবে যখন বাংলার মানুষ ক্ষুধা-দারিদ্র বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে উন্নত জীবন পাবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্য তুলে ধরে স্পিকার বলেন, গত ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তৃতায় বলেন “আমি মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি।” বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুধাবন করে মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের উন্নতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আর একটি বক্তব্যের লাইন তুলে ধরে স্পিকার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুর আগে মানবতাকে অগ্রাধিকার দিতেন এবং জনগণের প্রতি তার ভালবাসা ছিল সীমাহীন। আমি এখন যা করছি তা জাতির পিতার আদর্শের প্রতিচ্ছবি।”
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দারিদ্র ক্ষুধামুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, বাঙালির প্রাণের গভীর হতে উৎসারিত নির্মল ভালবাসায় অশ্রুধারায় সিক্ত হৃদয় নিংড়ানো আবেগ ও পরম শ্রদ্ধায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থাকবেন সদা সুক্ষ সমুজ্জল। ইতিহাসের পাতায় চিরজাগ্রত অমর এক নাম শেখ মুজিব। তারই প্রেরণায় বাঙালি এগিয়ে যাবে জীবনের জয়গান। এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে।
কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি তুলে ধরে স্পিকার বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বলেন, রবিন্দ্রনাথের ভাষায় এভাবেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানে জন্মশতবার্ষিকীর মুজিববর্ষে এই বিশেষ অধিবেশনে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই।
“তোমারই নাম বলব আমি বলব নানা ছলে, বলব বিনা ভাষায়, বলব আশায় ,বলব মুখের হাসি দিয়ে, বলব চোখের জ্বলে, তোমারই নাম বলব আমি বলব নানা ছলে” বিশ্ব কবির এ কবিতার পংক্তির আবৃতির মাধ্যমে আলোচনা শেষ করেন তিনি।
এসি
আরও পড়ুন