রিজার্ভ চুরি: রিজাল ব্যাংককে তলব করেছে ফিলিপিন্সের আদালত
প্রকাশিত : ১৬:৪৫, ১২ জানুয়ারি ২০২১
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের মাকাতি-র বিচার আদালতে হাজির হওয়ার নোটিশ পেয়েছে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন। ব্যাংকটি এ নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে এবং রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অভিযোগ করেছিলো তার ভিত্তিতেই ব্যাংকটিকে ডাকা হয়েছে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান ডিসট্রিক্ট আদালতে যে মামলা করেছিলো বাংলাদেশ সেটিই চলমান আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, "আমরা মনে করি এটি আগের মামলারই ধারাবাহিকতা। আর রিজাল ব্যাংকের কর্মকর্তাদের রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ সেখানকার আদালতে আগেই প্রমাণ হয়েছিলো। নতুন করে আমরা কিছু করিনি"।
ফলে এটি এখনও পরিষ্কার নয় যে মাকাতির আদালত থেকে ঠিক কোন মামলায় রিজাল ব্যাংককে তলব করা হয়েছে। কারণ ফিলিপিন্সেই এ সংক্রান্ত অন্তত বারটি মামলা হয়েছিলো এবং কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারাদণ্ডসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছিলো।
রিজার্ভ চুরি: যা ঘটেছিলো
২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি দশ লাখ ডলার চুরি যায় এবং এই অর্থ ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজাল ব্যাংকের শাখায় চারটি ভুয়া অ্যাকাউন্টে যায় এবং সেখান থেকে দ্রুত অর্থ উত্তোলন করা হয়। পরে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র পনের মিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায় প্রমাণ হওয়ায় ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) এর প্রাক্তন শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া দিগুইতোকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করে ফিলিপিন্সের আঞ্চলিক আদালত।
এই অবৈধ অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে ২০১৬ সালের অগাস্টেই আরসিবিসিকে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ১শ কোটি পেসো অর্থাৎ ১ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।আরসিবিসি'র সাবেক কোষাধ্যক্ষ এবং যে শাখাটি থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছিল সেখানকার পাঁচজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছিলো।
এছাড়া সেখানকার আইন বিভাগ এ বিষয়ে প্রায় এক ডজন মামলা পরিচালনা করছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন এরই ধারাবাহিকতাতেই মাকাতির আদালত থেকে রিজাল ব্যাংককে নতুন করে ডাকা হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের আদালতে কয়েকটি মামলা করেছিলো বাংলাদেশ যেগুলো খারিজের আবেদন করেছিলো রিজাল ব্যাংক কিন্তু আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে চারটি মামলা চালিয়ে যাওয়ার রায় দিয়েছিলো।
নিউইয়র্কে মামলায় যা বলেছিলো বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান ডিসট্রিক্ট কোর্টে এ মামলা করেছিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মামলায় মূলত ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংক এবং এর পদস্থ কর্মকর্তাসহ কয়েক ডজন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো।
অভিযোগে বলা হয়েছিলো রিজার্ভের অর্থ চুরি করতে 'অনেক বছর ধরে বড় আকারের ও অত্যন্ত জটিল পরিকল্পনা'র সাথে ব্যাংক এবং এসব ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অজ্ঞাত কিছু উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের সহযোগিতায় ওই অর্থ চুরি হয়েছে।
হ্যাকাররা 'নেসট্যাগ' ও 'ম্যাকট্রাক' নামক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কে ঢুকতে পেরেছিলো। অভিযোগ অনুযায়ী, চুরি হওয়া অর্থ নিউইয়র্ক ও ফিলিপিন্সে রিজাল ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে স্থানান্তর করা হয়েছে।পরে এই অর্থ ক্যাসিনোর মাধ্যমে বেহাত হয়ে যায়।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিলো যে, "বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি), সোলায়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনো, মাইডাস রিসোর্ট ও ক্যাসিনো এবং অন্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার বিপরীতে বিবাদীদের করা আবেদন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সাউদার্ন ডিসট্রিক্ট কোর্ট খারিজ করেছে"।
তবে বাংলাদেশে কারা জড়িত তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি, অগ্রগতি নেই বিচারেও ২০১৬ সালের মার্চে ঢাকার মতিঝিল থানায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উপ-পরিচালক। পরে আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছিলো।
গত মাসের তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের একটি তারিখ থাকলেও তারা তা দিতে পারেনি ফলে আদালত নতুন তারিখ দেয় ১৩ই জানুয়ারি। এছাড়া রিজার্ভ চুরির বিষয়ে কোনো তদন্ত প্রতিবেদনও বাংলাদেশ সরকার কখনো প্রকাশ করেনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসি
আরও পড়ুন