স্বাস্থ্যমন্ত্রীর শরীরে টিকা প্রয়োগ
প্রকাশিত : ১৩:০৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে করোনা প্রতিরোধী টিকা। আজ রোববার সকালে দেশব্যাপী টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পর মহাখালীর গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেন তিনি। একই সাথে টিকা নেয়ার কথা রয়েছে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের।
এর আগে রোববার সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সারাদেশে গণহারে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রয়োগকৃত ভ্যাকসিন সবচেয়ে নিরাপদ দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এটা এক মাসের কাজ নয়। চলমান ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সারা বছর চলবে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো সমালোচনা নয়। করোনার টিকা পেতে ছয় মাস সময় লাগবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে কোভাক্স (করোনার টিকা) আসবে, সেই টিকা দেয়া হবে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপিসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আজ টিকা নিবেন। এতে জনগণ আরও উদ্বুদ্ধ হবে। আপনারা টিকা নিন, সুস্থ থাকুন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সকল জেলার সঙ্গে আমরা যুক্ত হয়েছি। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আছেন। তাদের সঙ্গে আমরা ভ্যাকসিন নিব। এটা নিয়ে যেন কোন রকমের রিউমার না হয়। এই ভ্যাকসিন খুবই নিরাপদ, যতগুলা ভ্যাকসিন আছে তাদের ভেতর এটা সবচেয়ে নিরাপদ। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। আমরা হাজার হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেব, লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টিকা নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জিনাত আরাসহ তিন বিচারপতি।
রোববার সকাল ৯টার দিকে তারা টিকা গ্রহণ করেন। অপর দুজন হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও একই বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যান্য বিচারপতিরাও এই হাসপাতালে টিকা গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
গত ২৮ জানুয়ারি বিএসএমএমইউ-তে প্রথম টিকা নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। পরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও টিকা গ্রহণ করেন।
এদিকে টিকাদান কার্যক্রম সফল করতে রাজধানীতে ৬৫টি স্থানসহ সারাদেশে হাজারের বেশি কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এই কাজে ঢাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ২০৬টি দল প্রস্তুত রয়েছে।
ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ২ হাজার ১৯৬টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য থাকবেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১ হাজার ১৫টি হাসপাতালে টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ২ হাজার ৪০২টি দল।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) টিকাদান কেন্দ্রগুলো হলো-
সংসদ সচিবালয় ক্লিনিক, মহাখালীতে সংক্রামক রোগ হাসপাতাল, উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মিরপুরের ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, শ্যামলীতে ঢাকা শিশু হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, জাতীয় বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ প্রতিরোধ কেন্দ্র, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, শ্যামলীর ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।
এ ছাড়া ডিএনসিসির মগবাজারের নয়াটোলা মাতৃসদন কেন্দ্র, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি মাতৃসদন কেন্দ্র, মিরপুর মাজার রোডের নেকি বাড়ির টেক মাতৃসদন কেন্দ্র, মিরপুরের বর্ধিত পল্লবী এলাকা মাতৃসদন কেন্দ্র ও উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের মাতৃসদনে করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) টিকাদান কেন্দ্রগুলো হলো-
সচিবালয় ক্লিনিক, ফুলবাড়িয়ায় সরকারি কর্মজীবী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতাল, রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতাল, আজিমপুর মা ও শিশু হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নয়াবাজারে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, পিলখানার বিজিবি হাসপাতাল, লালবাগে ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতাল।
এ ছাড়া বংশালের কসাইটুলী নগর মাতৃসদন, হাজারীবাগে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন নগর মাতৃসদন, ধলপুরে নগর মাতৃসদন, উত্তর মুগদা মাতৃসদন ও খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া মাতৃসদন কেন্দ্রে করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনা টিকা প্রদান শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এআই//
আরও পড়ুন