৭ মার্চের ভাষণের মর্মার্থ বিএনপির না বোঝাটাই স্বাভাবিক: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ২৩:৫৯, ৮ মার্চ ২০২১
ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মর্মার্থ বিএনপির না বোঝাটাই স্বাভাবিক। কারণ, অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণাকারির এই দলটি বরাবরই পরাজিত শক্তির আজ্ঞাবহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর পক্ষে গণহত্যা শুরু করেছিল, পাকিস্তানী জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে যাচ্ছিল এবং যে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি হিসেবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় বসে অবৈধভাবে দল গঠন করেছে, সেই দলের নেতারা ৭ মার্চের ভাষণের মর্ম বুঝবে না এটাইতো খুব স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘এতে যেমন অবাক হওয়ার কিছু নেই। তেমনি এদের নিয়ে আলোচনা করারও কিছু নেই। ধরেই নিতে হবে এরা এখনও সেই পুরনো প্রভুদের ভুলতে পারেনি। তাদের পালিত দল হিসেইে তারা আছে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
তিনি ক্ষোভের সংগে এ সম্পর্কে আরো বলেন, ‘পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী যা বোঝে এরাও তাই বোঝে তবে, বাঙালি যা বোঝে তারা তা বোঝে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনার সভাপতিত্বকালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় কার্যালয় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে তারা কিছুই দেখে না, কিছুই বোঝে না, কিছুই খুঁজেও পায় না। তারা না-ই পেতে পারে, তবে, হঠাৎ আমরা দেখলাম তারা ৭ মার্চের দিবসটি উদযাপন করতে যাচ্ছে (বিএনপি)। অথচ এই ভাষণে নাকি তারা কিছুই খুঁজে পায়নি। তবে, ভাষণটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জায়গা করে নিয়েছে।
তিনি ভাষণের তাৎপর্য অনুধাবনে ব্যর্থদের ‘নির্বোধ’ আখ্যায়িত করে বলেন, দেশের এই লোকজন তাৎপর্য না বুঝলেও একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক জ্যাকব এফ ফিল্ড আড়াই হাজার বছরের মানুষের মাঝে উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী ভাষণ নিয়ে গবেষণা করে যে ৪১টি ভাষণ নির্বাচন করেছেন তার মধ্যে ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কো আবার এই ভাষণটিকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করেছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পত্রিকা নিউজ উইক তাদের ১৯৭১ সালের এপ্রিল সংখ্যায় জাতির পিতার ছবি দিয়ে তাদের পত্রিকার কভার স্টোরি করে এবং জাতির পিতাকে সেখানে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ বলে আখ্যা দেয়। সে সময় পৃথিবীর অনেকগুলো দেশের পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয়।
তিনি বিএনপি নেতৃবৃন্দের এই ভাষণে ‘স্বাধীনতার কোন ঘোষণা’ না পাওয়া সম্পর্কে বলেন, আমি আমার দলের নেতা-কর্মীদের বলতে চাই এরা পাবে না। কারণ, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীও পায়নি। তারা অনেক খুঁজেছে। তাই, আমার মনে হয়, এরা ঐ পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর পদলেহনকারী, তোষামোদী ও তোষামোদকারীদের দল।
পাকিস্তানী জেনারেলদের আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে, পাকিস্তান বাহিনী সে সময় সম্পূর্ণ তৈরী ছিল মুজিব কি ভাষণ দেয় (স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই) মাঠের সব জনতাকে আক্রমণ করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার। অথচ জাতির পিতা জানতেন কি ভাষায় বললে জনগণ বুঝবে, তিনি সেভাবেই বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী একে বঙ্গবন্ধুর রণকৌশল বলেও উল্লেখ করেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন।
আরো বক্তৃতা করেন-দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যানির্বাহী সদস্য ও বিএনএ মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহানও বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক সম্পাদিত এবং ইয়াসিন কবির জয় প্রকাশিত ‘মুক্তির ডাক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, তারা (তিনি এবং শেখ রেহানা) ৭ মার্চের ভাষণের সময় স্টেজের পাশেই ছিলেন এবং ভাষণ শেষে যাওয়ার সময় উৎফুল্ল জনতা ফুলার রোডে তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরে তাদের মুখে শ্লোগান ছিল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন করো। মানুষ যেন (খুশীতে) খৈ-এর মত তখন ফুটছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য আর সেদিনের সেই ব্যক্তি বিশেষের উক্তি দেখে মনে হয়, তারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কোন দালালী নিয়ে ছিল। যারা এখনও সেই দালালি ভুলতে পারেনি। সেইজন্যেই তারা ‘কিন্তু’ খোঁজে।
বিএনপি’র সেই ‘কিন্তু’ খোঁজা সম্পর্কে তিনি তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের সার্বিক ভূমিকার উল্লেখ করে বলেন, ‘২৫ মার্চ চট্টগ্রামে যারা বেরিকেড দিচ্ছিল তাদের অনেককে জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, জিয়া ২৫ ও ২৬ মার্চ দুই দিনই হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৭ তারিখ সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে গিয়েছিল জিয়া। সে যাতে অস্ত্র নামাতে না পারে, আমাদের স্বাধীনতাকামীরা তাকে আটকায়।’
চট্টগ্রামে সে সময় অবস্থানকারী যাদের অনেকেই এখনও দেশে-বিদেশে রয়েছেন তাদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ তারিখ প্রথম প্রহরেই জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআরএর ওয়্যারলেস যোগে সারাদেশে প্রচার করা হয়।
পরে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করায় একজন সেনা কর্মকর্তা প্রয়োজন পড়ায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যদিও মেজর রফিককে প্রথম অনুরোধ করা হয়েছিল তিনি অ্যামবুশ করে বসে থাকায় জিয়াকে দিয়েই ঘোষণা পত্র পাঠ করানো হয়। যা দিনভর সারাদেশে দলের নেতা-কর্মীরাই প্রচার করেছে।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, ‘সে (জিয়াউর রহমান) তো আগাগোড়া পাকিস্তানের দালালি করে আসছে। তার জন্মও সেখানে। লেখাপড়াও ওখানে। সে কবে বাংলাদেশের হলো? তিনি আরো বলেন, চাকরি সূত্রে বাংলাদেশে এসেছে। সে সূত্রে বিবাহ করে পরবর্তীতে থেকে যায়। এটাই তো বাস্তবতা। তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদেরকে সম্মান দেয়া হয়েছে। কিন্তু, এদের চরিত্র তো বদলায়নি। ঠিকই বেঈমানি-মুনাফেকি করেছে।
‘সে-ই এই হত্যাকাণ্ডে (১৫ আগস্ট) মূলহোতা ছিল এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। যারা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করে, দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, এ দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দল থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী আশা করবে?’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এটা তাদের একটুও পছন্দ না। তাদের কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু। বিলাসী জীবন কাটিয়েছে। এরা মানুষের কষ্ট বুঝবে কী করে?
তিনি বলেন, আমি আমাদের নেতাকর্মীদের বলবো, ওরা কি বললো, এটা নিয়ে কথা বলার দরকার নেই, চিন্তা করার দরকার নেই। এই করোনায় তারা কতো কথা বলেছে, কিন্তু টিকা তো তাদের নিতে হলো। আমি সরকারে আছি, পয়সা দিয়ে টিকা কিনে ফ্রি দিচ্ছি। বিনা পয়সার টিকা তো বিএনপি নেতারা নিয়েছে। এর আগে কী বলেছে? এজন্য তারা কী বললো তা দেখার দরকার নেই।’- বাসস
এসি
আরও পড়ুন