ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা আপাতত বন্ধ : মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৪, ১১ মে ২০২১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ থাকবে। পরিবেশবিদসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলমান স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যানে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মোট ১শ’টি গাছ কাটার কথা থাকলেও ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি গাছ কাটা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদসহ অন্যান্য সচেতন মহল উদ্বেগ জানিয়েছেন, সেহেতু তাদের এই উদ্বেগকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার ও নগরপরিকল্পনাবিদদের সাথে আলোচনা করব এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে কিভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাজ চলমান রাখা যায় তার উপায় বের করার চেষ্টা করব। তবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তি সংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সকল ঐতিহাসিক স্থান যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করা হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর অন্যান্য উদ্যানের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য ভিন্ন। অন্যান্য উদ্যান শুধুই একটি উদ্যান। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম সূতিকাগার। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ইতিহাসসহ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সাথে মিশে আছে এই উদ্যানের নাম। এ ময়দানে বিশাল সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলে বঙ্গবন্ধুকে এ উদ্যানে বিশাল গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও এখানে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি এখানে ভাষণ দেন এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের ভারতে ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়েই ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার ২৫ বছর উদযাপনে এই উদ্যানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ববরেণ্য নেতা নেলসন মেন্ডেলা, ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত, তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল উপস্থিত ছিলেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলের ঘোড়দৌড় তথা জুয়াখেলার মাঠকে বঙ্গবন্ধুই উদ্যানে রুপান্তর করেন এবং নামকরণ করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও ঘটনাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে শিখাচিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভুগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়েছে।’

আকম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে দৃষ্টিনন্দন ও আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা ও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ’ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। যেখানে পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভূগর্ভস্থ ৫শ’গাড়ীর কার পার্কিং, ৭টি ফুড কিয়স্ক (মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের পৃথক টয়লেট ফ্যাসিলিটিসহ ) ও শিশু পার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এতবড় এলাকায় এত মানুষের সমাগম হয় তাতে কোন টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ এবং রিফ্রেশমেন্টের কোন ব্যবস্থা ছিল না। পরিবারসহ দর্শনার্থীরা উদ্যানে যাতে ভ্রমণ করতে পারে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পাশাপাশি নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পরিবেশে কয়েক ঘন্টা সময় কাটাতে পারে তার সকল ব্যবস্থা এখানে করা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাবারের দোকান/ ভাতের হোটেল ইত্যাদি বানানোর জন্য গাছ কাটা হচ্ছে মর্মে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক। সারা বছর যাতে উদ্যানের কোন না কোন গাছে ফুল থাকে, মানুষ এখানে প্রবেশ করে যাতে একটা আমেজ পায় যে, সে একটা বেড়ানোর জায়গায় এসেছে। এভাবে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপন কার্যক্রম বিন্যাস করা হয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের গৌরবোজ্জল মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের জানতে পারে।

মন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গৃহীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যানে ছোট-বড় কিছু সংখ্যক গাছ কর্তন করা হলেও এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অন্তত ১০ গুন বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১ হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী আসবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্থান ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সারেন্ডার করবার স্মৃতি মুছে ফেলার হীন উদ্দেশে জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক নির্মাণ করেন। উনারা ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, আর আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন ঢাকা এবং আশপাশের স্কুল-কলেজের ২ হাজার শিশুকে উদ্যান পরিদর্শনে আনা হবে। যাতে তারা দেশের ইতিহাস সম্পর্কে সম্মুখ ধারনা নিতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শাহবাগ থানাকে বর্তমান স্থান থেকে সরিয়ে রমনা কালি মন্দিরের পেছনে এবং ফুলের দোকানগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে।
সূত্র : বাসস
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি