ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকার আকাশে রহস্যময় মিথেনের উৎস কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৩, ১৯ মে ২০২১

জীবন আছে এরকম জিনিস পচে গিয়ে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক গ্যাসও। তবে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো নয় মিথেন। এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলে খুব অল্প কিছু সময়ের জন্য থাকে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এটি কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর।

এবছর এপ্রিল মাসে ব্লুমবার্গ মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে যেসব দেশ তার একটি বাংলাদেশ। দেশটিতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে।

প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি কেরস এসএএস স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা মিথেনের অন্যতম উৎস হিসেবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে চিহ্নিত করেছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও তাদের গবেষণায় পেয়েছে একই ধরনের ফল। 

ব্লুফিল্ড টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা ইওতাম এরিয়েল বলেছেন, তাদের বিশ্লেষণেও দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশে প্রচুর মিথেন উৎপন্ন হচ্ছে।

এই গ্যাসের উৎস সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে- ধান ক্ষেত, ময়লা আবর্জনার ভাগাড় বা ল্যান্ডফিল, কয়লার মজুদ, পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস বের হয়ে আসা ইত্যাদি।

তবে বাংলাদেশের অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতে যে মিথেন গ্যাস দেখা যাচ্ছে তার উৎস যে বাংলাদেশ তার পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোন প্রমাণ নেই।

জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. আহসান উদ্দিন বলেছেন, এই অঞ্চলের আরও অনেক দেশেই ধান চাষ হচ্ছে, ভরাট হচ্ছে জলাভূমি- তাই এই মিথেন গ্যাস যে বাংলাদেশেই উৎপন্ন হয়েছে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

ব্লুমবার্গের এই রিপোর্টটি দেখেছেন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষক ড. মালিহা মুজাম্মিল। তিনি বলছেন, বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার উপরে পাওয়া মিথেনের উৎস কী হতে পারে সেটা বলা খুব কঠিন।

তিনি বলেন, এর উৎস জানতে যেখানে যেখানে মিথেনের ঘনত্ব বেশি সেখানে আরও গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে স্যাটেলাইটের ছবি দেখে ধারণা হচ্ছে, যেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার ভাগাড় আছে সেখানে মিথেনের ঘনত্ব অনেক বেশি।

ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকায় এরকম বড় দুটো ভাগাড় বা ল্যান্ডফিল রয়েছে যেখানে শহরের সব বর্জ্য নিয়ে ফেলা হয়। একটি ঢাকার দক্ষিণে মাতুয়াইলে যা প্রায় ২৫ বছরের পুরনো। এর আয়তন ১০০ একর। অন্যটি উত্তরাঞ্চলীয় আমিনবাজার এলাকায় যা শুরু হয়েছে ২০০৭ সালে। এর আয়তন ৫২ একর।

ড. মুজাম্মিল বলছেন, এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিক ও পরিবেশ-বান্ধব করে মিথেনের নির্গমন কমানো যেতে পারে। বিশেষ করে জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করে ফেলতে হবে। রিসাইক্লিং করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

মিথেনের অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে কৃষি খাত এবং গরু চাষ। দেশটিতে যত অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটছে এধরনের গ্যাসের নির্গমনও তত বেড়ে যাচ্ছে। একারণে পরিবেশের ক্ষতি করে না এরকম কৃষি ও গরুর চাষের পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে।

জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে মিথেন গ্যাসের নির্গমন কমানো খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় মিথেনের ৮৪ গুণ বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে দুটো গ্যাসেরই নির্গমন কমাতে হবে।

বর্ণ ও গন্ধহীন এই মিথেন গ্যাস যখন উপরে উঠে যায় তখন সেটা তাপকে আটকে রাখে। মিথেনের এই ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও অনেক বেশি। তাপকে আটকে রাখার মাধ্যমে এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান একটি কারণ।

বাংলাদেশে এই মিথেন গ্যাসের নির্গমন কিভাবে কমানো সম্ভব?

ড. মালিহা মুজাম্মিল বলছেন, ‘মিথেন গ্যাসের যেসব উৎস যেমন ধান ক্ষেত, আবর্জনার ভাগাড়, গ্যাস পাইপের ছিদ্র, কয়লার মজুদ- এসব বদলানোর ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। কৃষি কাজে চাষের ক্ষেত্রে ফসলের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। তাহলে হয়তো মিথেনের নির্গমন কিছুটা কমে আসবে।’
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এএইচ/এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি