তামাক সেবনে বছরে করোনার চেয়ে ১৩ গুণ বেশি মানুষ মারা যায়
প্রকাশিত : ২১:১৮, ১৭ জুন ২০২১
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তুলনায় দেশে তামাক সেবনের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর ১৩ গুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, তামাকমুক্ত বিশ্ব গড়ি’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রি. জেনারেল (অব.) ডা. আবদুল মালিক এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার।
শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ এসময় বলেন, প্রতিবছর গড়ে ১২ লাখ লোক ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ও হৃদরোগ। এসব রোগে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, সবাই যখন তামাকমুক্ত দেশ গড়তে চাইছে, তখন একটি শ্রেণি রয়েছে যারা বলেন যে সরকার এ খাত থেকে অনেক বেশি রাজস্ব পেয়ে থাকে। তবে ২০১৭ সালে সরকার তামাক থেকে রাজস্ব পেয়েছে ২২ হাজার ২৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। কিন্তু একই বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পেছনে। শুধু তামাকজনিত চিকিৎসায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে।
তামাকশ্রমিকের ওপর গবেষণার তাগিদ দিয়ে শাহাদৎ হোসেন বলেন, তামাক চাষে জড়িতদের আয়ু অন্যান্য মানুষের চেয়ে অনেক কম। গবেষণা করলে দেখা যাবে, তামাক উৎপাদন ও চাষে যারা জড়িত, তারা অন্য শ্রমিকদের চেয়ে অনেক আগেই মারা যান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন - প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি করে। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় সাত হাজারের বেশি ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া নারী ও শিশুসহ অধূমপায়ীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, তামাক সেবনের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস ও ক্রনিক লাং ডিজিজসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে বছরে পৃথিবীতে ৮০ লক্ষাধিক ও বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। এছাড়া সরকার তামাক খাত থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করতে হয়।
লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রোডম্যাপ প্রণয়নসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে অবশ্যই তামাকমুক্ত করা হবে।
সভায় বক্তারা বলেন, ধূমপান বিষপান, ধূমপানের পক্ষে একটিও ভালো কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। ধূমপানে মানুষের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গের ক্ষতি হয়। ধূমপান অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধূমপানের কারণে মানুষের শরীরে প্রায় ৭০টি ক্যান্সারের জীবাণুর সৃষ্টি হয়। যারা তামাক সেবন করেন তারা নিজেদের ও তাদের আশপাশের মানুষেদেরও ক্ষতি করেন। বর্তমান করোনা অতিমারিতেও ধূমপায়ীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তামাক সেবনে প্রতিবছর করোনার চেয়ে বেশি লোক মারা যান।
তারা আরও বলেন, শুরু হয় ধূমপান দিয়ে, যার শেষ পরিণতি হয় মাদক গ্রহণ। মাদকের পরিণামও ভয়াবহ মহামারির মতো। আমাদের সন্তান ঐশি সে মাদকে আসক্ত হয়ে নিজের জন্মদাতা বাবা-মাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির সন্তানরাও মাদকে আসক্ত। মাদক সেবনের ফলে মানুষের জীবনী শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। সন্তানের তামাক ও মাদক সেবনের কারণে জন্মদাতা বাবা-মাকে কান্না করতে হয়। জন্মদাতা বাবা-মাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। মাদকাসক্ত সন্তানরা প্রথমে বাবা-মার কাছে টাকার জন্য চাপ দেয়, টাকা না দিলে তাদের গায়ে হাত তোলে এবং পরবর্তীতে তারা ছিনতাই রাহাজানিসহ হত্যার মতো কাজেও লিপ্ত হয়।
বলা হয়, তামাকের কারণে আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যান, ক্ষতি হয় অনেক অর্থের। তামাকের ক্ষতির কোনো শেষ নেই। তাই আমাদের তামাক উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। তামাকের বিকল্প অনেক ফসল আছে, আমাদের সেগুলো চাষ করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন রয়েছে, তবে আইন প্রয়োগের থেকেও বেশি প্রয়োজন সবাইকে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতন করে গড়ে তোলা। সবাইকে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতন করতে পারলেই আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবো।
এসি
আরও পড়ুন