আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস, স্বদেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা
প্রকাশিত : ০৮:৩৫, ২০ জুন ২০২১
আজ ২০ জুন, বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প এখন কক্সবাজারে। নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জাতিগত স্বীকৃতি আর নাগরিক অধিকার নিয়ে স্বদেশে ফিরতে চান।
নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা। তাই শরণার্থী দিবসে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট রোহিঙ্গাদের আবেদন তাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার। তবে দেশে যেতে আদৌ পারবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছে তারা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৭ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এর আগে আসা তাদের সব মিলিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাই তো, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প পরিণত হয় বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মূখে রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি করে আসছে। তাছাড়া জাতিসংঘের সাথে মিয়ানমারের চুক্তির পরও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে শংকিত রোহিঙ্গারা। তাদের দাবি, রোহিঙ্গা হিসেবে তাদের জাতিগত স্বীকৃতি, নাগরিকত্ব প্রদান, নিজ ভিটে-মাটি ফেরত দেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ দিলে তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার এলাকার ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘প্রাণ রক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতোই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার।’
উখিয়ার বালুখালী ২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি জানান, ‘দীর্ঘ ৪ বছর সময় ধরে আমরা বাংলাদেশে অবস্থান করছি। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের মিয়ানমারে ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের চাল-চাতুরির কাছে হেরে গেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আমরা যে কোন মূল্যে স্বদেশে ফেরত যেতে চাই’।
শুধু মোহাম্মদ ইদ্রিস ও আয়ুব আলী মাঝি নয়, তাদের মত উখিয়া-কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরুল হাকিম, সেগুপা বেগম, লালু ও ফয়েজ উল্লাহ মাঝিসহ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ শুধু চাইলে হবে না, মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে কেবল প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার পথ খুলতে পারে।
রোহিঙ্গা শরনার্থী কমিউনিটির সহ-সভাপতি মাষ্টার আব্দুর রহিম জানান, বর্তমানে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরও জটিল হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে তার রায় হলে এবং জাতিসংঘ জোরালো ভূমিকা পালন করলে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে পারবে বলে মত প্রকাশ করেন এই রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা।
উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সঠিক উদ্যোগ না নেয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেমন ব্যর্থ হয়েছে তেমনি দীর্ঘ মেয়াদী অবস্থান করায় রোহিঙ্গাদের কারণে শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই আমাদের একমাত্র কাম্য। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ক্রমশ জটিল হয়ে পড়েছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসা শুরু হয়। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ আগমন ঘটে। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ জন রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।
এএইচ/
আরও পড়ুন