ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘শেখ মুজিব কেবল বঙ্গের বন্ধু নন, তিনি ভারতেরও বন্ধু’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪৫, ১২ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৮:৫২, ১২ আগস্ট ২০২১

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকাল মৃত্যু না হলে এই উপমহাদেশে রাজনীতির ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো বলে মনে করেন ভারতের যুব নেতারা। বুধবার রাতে এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব নেতারা মন্তব্য করেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বঙ্গের বন্ধু নন, তিনি ভারতেরও বন্ধু। এই উপমহাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেন।

বুধবার (১১ আগস্ট) রাতে বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেন্দ্র (সিবিআইআর) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সিবিআইআর পরিচালক ও সাংবাদিক শাহিদুল হাসান খোকনের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনায় অংশ নেন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্তমান প্রজন্মের যুব নেতারা। আয়োজক সংস্থার গবেষণা বিভাগ কর্তৃক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে ভারতের যুব নেতারা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন এবং কর্মের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। তরুণ ছাত্রনেতা হতে মুজিব কিভাবে বাঙ্গালীর বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেন তরুণ রাজনীতিকরা। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) যুব মোর্চার প্রাক্তন জাতীয় সম্পাদক ও বর্তমান মুখপাত্র সৌরভ শিকদার বলেন, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বতোঃস্ফূর্ত জননেতা হতে পেরেছিলেন এবং সর্বসাধারণ একাগ্রচিত্তে তাকে নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘ইদানিং দেখছি, বাংলাদেশে একটা গোষ্ঠী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুকে উপেক্ষা করার প্রবণতা শুরু হয়েছে, কিন্তু জন্ম পরিচয় ছাড়া যেমন কারো পরিচয় হয় না; তেমনি বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে আলোচনার কোন মানে হয় না। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ।’ 

সৌরভ সিকদার আরো উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু ’বঙ্গবন্ধু’ উপাধী তিনি ১৯৬৯ সালে পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকেই মানুষ আগে থেকেই নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিলো। শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হত না। বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণে বাঙ্গালী জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর উপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি নজরুল ইসলাম এর একটা বিরাট প্রভাব ছিলো। তাই কবিগুরু লেখা “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” গান তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আজকের বাঙ্গালীদের অনেক শেখার আছে।

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ যুব কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক শ্রেয়া হালদার আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একথা বলতে হয় যে, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা ছিলো, ধর্ম নিরপেক্ষতা, তার সাথে সমাজ তান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা, এবং তার মধ্যে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ যেটাকে মুজিববাদ বলে আমরা জানি। সেই জায়গাটা সকল বাঙ্গালী জাতিকে উৎসাহিত করে। এবং তার যে চিন্তা-ভাবনা ছিলো সেগুলো আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে লালন ও অনুসরণ করা উচিৎ। কেননা সেই চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই আমরা সামাজিক সহাবস্থান, সামাজিক সংগতি, সামাজিক একতাবোধ আমাদের ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশের সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম একেবারেই পরিপূরক।

আলোচনায় যুক্ত হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত পেশাজীবী যুবনেতা বিজন সরকার বলেন, একটা তর্জনী উঠিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে যিনি জাগ্রত করেছিলেন, বাঙ্গালী জাতিকে নিয়ে যিনি বিশ্বের দরবারে ইতিহাসের পাতায় স্থান দেবে এই ভাবনা থেকে মানুষকে যিনি একত্রিত করতেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ তার ডাকে সাড়া দিতেন, তিনি সবার প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে কাঁটাতারের বেড়া ভারতের সাথে তৎকালীন পাকিস্থান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশকে বিভেদ করেছিলো। শুধুমাত্র একটা কাঁটাতার ভারত আর আজকের বাংলাদেশ এর ভৌগোলিক ভাগ হতে পারে, কিন্তু আমরা বিশ্ব বাংলায় একাত্ববোধ অনুভব করি বাংলাদেশের সাথে। বঙ্গবন্ধু শুধু নেতৃত্ব দেয়নি, স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলো। আর এই স্বাধীনতায় বন্ধু দেশ হিসেবে পাশে ছিলো ভারত ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাই ভারত আর বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সারা জীবন অটুট থাকবে।

ভারতের তফশিল ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারী মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক আলোচনায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙ্গালী জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছে এটা গোটা পৃথিবীতে বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমাদের গর্বের বিষয়। ভারতবর্ষের সাথে বাংলাদেশের যে সাংবিধানিক কাঠামো এবং সেখানকার যে নীতিমালা, তার সাথে অনেকাংশে মিল আছে। ভারতের আদলে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সাংবিধানিক নামকরণও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করেছেন। এবং সংবিধানে সব ধর্মের, বর্ণের, লিঙ্গের মানুষের অধিকার সমানভাবে দেয়া হয়েছে এবং ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তিনি তুলে ধরেছিলেন। ফলে ভারত-বাংলাদেশের সাংবিধানিক মিলটাই আমাদের নাড়ির আরেকটা বন্ধন।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা থেকে ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির যুবনেতা চন্দন দেবনাথ বলেন, যদিও বঙ্গবন্ধুর নামের আগে বঙ্গ কথাটি যুক্ত তবুও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতেরও বন্ধু। দুই দেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরো বেশি চর্চা হওয়া উচিত দাবি করে এই যুব নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ প্রতিটা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে শিক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন সব দেশের নেতাদের চর্চা করা উচিৎ।

‘ভারতের তরুণ রাজনীতিকদের চোখে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন-সিবিআইআার এর গবেষক আশরাফুল ইসলাম। প্রবন্ধে রাজনীতির ঐতিহাসিক পরম্পরার কথা তুলে ধরে তিনি  সমকালীন রাজনীতির মাঠে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি