দুই মেয়েকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে জাপানি নারী
প্রকাশিত : ১৮:০০, ১৯ আগস্ট ২০২১
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রাক্তন স্বামীর কাছ থেকে ২ মেয়েকে ফিরে পেতে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স রিট করেছেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬)। এছাড়া ২ মেয়েকে আদালতে হাজির করতেও আবেদন করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি করা হয়। নাকানো এরিকোর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির রিটটি দায়ের করেন।
শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের (৫৮) সাথে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর দেশটির আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বাসবাস থাকেন।
এই দম্পতির ১২ বছরের সংসারে ৩ কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হচ্ছে, জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। তারা ৩ জনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
কিন্তু এতে মেয়ের মা এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
পরে গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর নিকট থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন।
এর প্রেক্ষিতে আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছেন।
এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এদিকে গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন।
এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে এসে এরিকো কোভিড পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানায়।
পরে গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয় এবং একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে জাপানি এই মা তার দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন। আজ (বৃহস্পতিবার) এই রিটের শুনানি হবে বলেও জানান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
আরকে//
আরও পড়ুন