ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জিয়ার শাসনামলে হত্যার বিচার হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:০৬, ৫ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ০০:১৬, ৫ অক্টোবর ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক ক্যু’র অজুহাতে সশস্ত্রবাহিনীর অসংখ্য কর্মকর্তা হত্যার বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত উল্লেখ করে এজন্য জনমত সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিষয়টা নিয়ে যখন দাবি উঠেছে তখন এটা নিয়ে নিশ্চই ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এরজন্য ভাল জনমতও সৃষ্টি হওয়া দরকার। কিভাবে মানুষগুলোকে সে (জিয়াউর রহমান) হত্যা করে গেল।’

প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে গণভবনে তাঁর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদান এবং যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর পর এই বাংলাদেশে বার বার ক্যু হয়েছে এবং এই ক্যু’র নামে শুধু এয়ারফোর্সের অফিসার, সৈনিক বা কর্মচারিই নয় সেনাবাহিনীরও বহুজনকে হত্য করা হয়েছে।

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যদি জেলখানাগুলো খোঁজ করেন যে, কোন জেলে কতজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তাহলে দেখবেন এরকম হাজার হাজার মানুষকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তাদের পরিবারগুলো লাশতো পায়ই নি, এরা যে গুম হয়ে গেল বা হারিয়ে গেল সেজন্য কারো কোন জবাবদিহি কখনও হয়নি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনসহ সরকার এবং পিএমও’র উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সাংবাদিকদের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন যারা ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে সেনা ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা হত্যার অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, এটা একটা আশার কথা যে এত বছর পর সবারই এই চেতনাটা এসেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এতকাল সবাই কেন এটা ভুলে থাকলো।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতাকে নিস্কন্টক করবার জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, এটাতো জানা কথা। শুধু সামরিক বাহিনী নয় আমাদের আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা ও গুম করেছে।

তিনি তৎকালীন মিডিয়া এবং বিএনপি’র দিকে সমালোচনার তীর ছুঁড়ে দিয়ে জিয়া প্রসঙ্গে বলেন, তাকে এমন একটা ফেরেশতার মত বানিয়ে দেয়া হয়ে গেল এবং শেষকালে স্বাধীনতার ঘোষকও বানিয়ে ফেলা হলো। সেটা নিয়ে তেমন কেন কেউ কথা বলেনি সেটা আমার প্রশ্ন। কারণ, আমার বাবা-মা-ভাই তাঁদের হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকারও আমার ছিল না। আমরাওতো তাঁদের লাশ দেখতে পারিনি। কিন্তু আমি সরকারে আসতে পেরেছি বলেই এই হত্যার (জাতির পিতা) বিচার করেছি। আবার জিয়াউর রহমান হত্যার বিচারও কিন্তু বিএনপি কখনো করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউটিনির বিচার করে যে ১১ জন সামরিক অফিসারকে ফাঁসি দিল সেটাও কিন্তু খুব অন্যায়ভাবে। কারণ, এদের অনেকে জানতই না কিন্তু রাতারাতি একটা ক্যামেরা ট্রায়াল করে ফাঁসি দিয়ে দিল।

তাঁরা তখন প্রতিবাদ করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তখন এটার প্রতিবাদ করেছিলাম তা তদন্ত হওয়া দরকার। এই মিউটিনিটি কেন হলো, কারা করলো, কারা জড়িত এবং কাদের ফাঁসি দিচ্ছে। সেটা কিন্তু করেনি। আবার জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বার বার যে ক্যু হয়েছে এবং বিভিন্ন কারাগারে যে ফাঁসি হয়েছে সেই হিসেবটা কিন্তু কেউ নেয়নি। এখন যেটা বের হচ্ছে। আমার মনে হয় সেটা আরো বের হওয়া দরকার। আরো তথ্য নিয়ে আসা দরকার এই পরিবারগুলোর।

তিনি বলেন, এই পরিবারগুলোতে জীবনে কেউ কিছু পায়নি। তাদের কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। পরিবারগুলো কি অবস্থায় রয়েছে তাও দেখেনি। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটনোর চেষ্টা করা হয়েছে। ’৭৭ সালে ক্যু’র নামে বিমানবাহিনীর ৫৬২ জন অফিসারসহ আরো বহুলোক এই সময় হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছে। এরই মাঝে আরো কয়েকটা ক্যু হয় এবং সেটা নিয়ে প্রায় ২ হাজারের কাছাকাছি বিমান এবং সামরিক বাহিনীর অফিসারদের মারা হয়।

প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন, ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ‘হায় হায় কোম্পানিতে’ প্রতারিত জনগণের অর্থ ফেরত আনার বিষয়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে দরিদ্রদের জন্য ঘর দেওয়ার কর্মসূচিতে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো যেমন জানান তেমনি বিবিধ বিষয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেন ।

নির্বাচন দূরে হলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচন কেন্দ্রিক কর্মকান্ড এখনই শুরু করা সংক্রান্ত দলীয় প্রধানের দলীয় ফোরামে ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিটা এইজন্য যে, আমি নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আর জনগণের ভোটে  করি। কারণ, আমি কখনই এই আত্মতুষ্টিতে ভুগি না যে, আমি এত কাজ করেছি আর আমার অপজিশন নাই। আর এটা যদি করি তবে খরগোশ আর কাছিমের দৌড়ের মত দশা হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনটাকে আমরা নির্বাচন হিসেবেই দেখতে চাই। জনগণের ভোট আমরা পেতে চাই, জনগণের কাছে যেতে চাই। তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে জনগণের ভোটেই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে চাই। আর জনগণ যদি ভোট না দেয় আসবো না, পরিস্কার কথা। আর প্রতিপক্ষ কে হতে পাওে বা পারবে না, সেটা তাদের ব্যাপার, তারা দেখবে। কিন্তু, দল হিসেবে আমাদের যে প্রস্তুতি আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই বোধ হয় একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে করে থাকে।

শুধু সাংগঠনিক কার্যক্রমই নয় তিনি বলেন, রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, দিক দর্শন বা দেশটাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কি সেই চিন্তা ভাবনা করেই আমরা কাজ করি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একদিকে দলকে সুসংগঠিত করা আর একদিকে ভোটের রাজনীতিতে জনগণের কাছে যাওয়া, জনগণের কাছে ভোট চাওয়া বা ভোটের প্রস্তুতি নেওয়া-যেটা আমি মনে করি, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেরই এই কার্যক্রমটা থাকা উচিত।

তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অপরপক্ষে কে আছে না আছে (বিরোধী দল) সেটা চিন্তা না করে নিজের কার্যক্রমটা আগে করতে হবে। কাজেই, বিরোধী দলে কেউ নেই বলে আমি আত্মতুষ্টিতে বসে থাকবো না। আমার সাংগঠনিক কাজ আমাকে অব্যাহত রাখতে হবে। আমার কাজের মধ্যদিয়ে মানুষের আস্থা ও বিশ^াস অর্জন করতে হবে। তাঁদের জন্য আরো কি কাজ আমি করতে পারি সেটাও এর মাধ্যমেই আমি খুঁজে পাব।

মানুষের কাছে না গেলে তাঁদের কষ্টটা কি তা জানা যায় না এবং সে কষ্টটা লাঘবের সুযোগ বা পরিকল্পনা কোনটাই থাকে না, বলেন তিনি। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশ ঘুরে মানুষের কষ্টটা অনেক কাছ থেকে দেখেছেন এবং সেই কষ্ট লাঘবেই তাঁর দল কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, দেশটাকেও উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি এ সময় ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে তুলে আনায় তাঁর পূর্বপরিকল্পনার উল্লেখ করে বলেন, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা উন্নয়নশীল দেশে গ্রাজুয়েশন লাভ করেছি এবং ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেও আমরা তা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছি। যারাই ক্ষমতায় আসুক তারা যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে পরিকল্পনাটাও তৈরী করে দিয়ে গেলাম।

এ সময় এই ব-দ্বীপটা যেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও বাসযোগ্য থাকে সেজন্য তাঁর সরকারের শতবর্ষমেয়াদী ডেল্টা পরিকলানারও উল্লেখ করেন তিনি। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি করবেন এবং তাঁর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে বলেও সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান প্রধানমন্ত্রী।

করোনার মধ্যেও সর্বশেষ কুমিল্লার উপনির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে নির্বাচন স্বতস্ফূর্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বাংলাদেশে অনেক চেষ্টা হয়েছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার। শুধু তাই নয়, নির্বাচন যেন ঠিকমতো না হয় বা মানুষ না যায় সেজন্য অগ্নি সন্ত্রাস থেকে শুরু করে হেন কোন কাজ নাই যা করা হয়নি। তারপরেই নির্বাচনটা সঠিকভাবে হয়েছে এবং তারপরে দেশে একটি স্থিতিশিল অবস্থা বিরাজমান ছিল বলেই আজকে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে।

বিএনপি’র দল গঠনকালীন ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তাদের ভোট পাওয়ার যৌক্তিকতার প্রশ্ন করে বলেন, বিএনপি’র জন্মটা কিভাবে। এটি কোন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোন দল নয় বা তারা এমন কোন নেতৃত্ব দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত নয়।

তিনি বলেন, তারা কোনদিন জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি। এটি অত্যন্ত সুবিধাবাদি এবং বলতে গেলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারির হাতে তৈরী করা একটি সংগঠন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রশ্ন তোলেন ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়েতো বিএনপি’র কোন অভিযোগ নেই, তাহলে সে সময় তারা জয়লাভ করতে পারেনি কেন? আর তখন প্রশ্ন তোলেনি কেন? আর আজকে আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে গেলাম, ইভিএম নিয়েও তাদের প্রশ্ন, ‘তারা আসলে সবসময় পরভাতে পালিত’ এবং জানে যে নির্বাচনে জিততে পারবে না তাই তাদের এত ক্ষোভ।

বিএনপি’র নেতৃত্ব নিয়ে তিনি বলেন, একটি দল কিভাবে নির্বাচনে জিতবে। তাদের সে নেতৃত্ব কোথায়, একজন এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। আরেকজন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং অগ্নিসন্ত্রাসসহ নানাধরনের কর্মকান্ডের ফলে দেশান্তরিত। সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাদেরকেই নেতৃত্বে রেখেছে। তাহলে জনগণ কোন ভরসায় ঐ দলকে ভোট দেবে। এর ফলে ঐ দলটার অভ্যন্তরে নির্বাচনে জয়লাভের যে বিশ্বাস সেটা হারিয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে জয়লাভের সেই বিশ্বাসটা যেহেতু তাদের মধ্যে নেই তাই তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থাৎ গণতান্ত্রিক যে ধারাবাহিকতাটা অব্যাহত রয়েছে তা ব্যহত করার প্রচেষ্টা চালানো।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০০১ সালের  সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের উত্থানসহ আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর বিএনপি-জামায়াতের হামলা এবং এবং তাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কিছু আলোকচিত্র উপস্থাপন করেন এবং বলেন তাদের কারনেই দেশে ইমার্জেন্সী আসলো।

এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনে আবার জনগণের আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বেছে নেয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ’৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশের জনগণ অন্তত এইটুকু পেয়েছিল-সরকার মানে জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে দেশের উন্নতি হয় এবং জনগণের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়।

তিনি এ সময় দেশে এতগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ডিজিটাল টেলিফোন এবং আওয়ামী লীগ সরকারে ছিল বলেই আজকে হাতে হাতে মোবাইল ফোন আসার বিষয়টিও সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন এবং বলেন ২০০৮ সালে আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিলাম তখন অনেক ব্যঙ্গও করা হয়েছিল। কিন্তু, আজকে দেশকে সত্যিই ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছে তাঁর সরকার। যে কারণে, করোনার মধ্যেও সারাদেশে একসঙ্গে যোগাযোগ রেখেও ভিডিও কনফারেন্স করা সম্ভব হচ্ছে বা ভার্চুয়াল কোর্ট করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্স এত ভালভাবে আমেরিকাতেও করা সম্ভব হয়নি, তাঁর সাম্প্রতিক সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ’৭৫ এর পর থেকে ২১ বছর জনগণ কি পেয়েছে আর আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের জন্য কি করেছে সেই তুলনাটা ভেবে দেখার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। তিনি বলেনৈ, তাঁর কাছে ক্ষমতাটা যে কোন ভোগের বস্তু নয় বরং একটি যে একটি দায়িত্ব সেটাই পুণরায় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য ছিল আমি যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে আমাকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেটা পূর্ণ করতে হবে।

আজকে অনেক উন্নত দেশে খাদ্যাভাব থাকলেও বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায়ে খাদ্য এবং প্রণোদনার অর্থ পৌঁছে দেয়ায় তার সরকার সেটা হতে দেয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি সবার আগে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। যাতে কোনভাবে এই অভাবটা না আসতে পারে। কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক প্রতারণার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যখন এসব ‘হায় হায় কোম্পানি’ তৈরি হয়, আপনারা (গণমাধ্যম) একটু সচেতন করলে মানুষ আর বিপদে পড়ে না। সে ব্যাপারেও বোধ হয় আপনাদের একটা দায়িত্ব আছে।

তিনি বলেন, মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর জন্য যে প্রতারণা করে, এদের উপযুক্ত শাস্তি অবশ্যই হবে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোকো (বেগম জিয়ার ছোট ছেলে) টাকা পাচার করেছিল। আমরা কিন্তু কিছু টাকা হলেও ফেরত আনতে পেরেছি। খালেদা জিয়ার ছেলের টাকা কিছুটা আমরা ফেরত আনতে পেরেছি। আরও এরকম বহু আছে অনেকের। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এই করোনাটা এসে আমাদের কিছু সমস্যা করেছে। নইলে কিন্তু আরও অনেকের টাকাই আমরা আনতে পারতাম। সে ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছিলাম। আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখল সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, আমাদের দেশে এক সময় যখন তালেবানের অগ্রাসনে একটা অবস্থান সৃষ্টি করেছিল। আমাদের দেশ থেকে বহু লোক তখন সেখানে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে আসে,অর্থ সম্পদ বানিয়ে নিয়ে আসে। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। যার জন্য আমাদের দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। যাই হোক, আমরা সেটাকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে এটা দুর্ভাগ্য মানব জাতির জন্য যে প্রতি সময় আমরা দেখি কোন একটা মহামারী দেখা দিলে সেখানে কিছু শ্রেণী আছে তারা তাদের আর্থিক লাভ লোকসানটার দিকে যত বেশি তাকায় ঠিক মানুষের দিকে অত তাকায় বলে আমার মনে হয় না। এটা আমার দেশে বলে না, এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এটা আমরা লক্ষ্য করি। যে কারণে আমি টিকাকে (করোনা ভ্যাকসিন) সার্বজনিন করার জন্য বলেছি। শুধু তাই নয়, আমি এটাও বলেছি যে বাংলাদেশ টিকা তৈরি করতে প্রস্তুত এবং এজন্য সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি আমরা ফর্মুলা চাই। আমরা সেটাই চাই এবং আমরা এটা বাংলাদেশে প্রস্তুত করতে পারবো।
ভ্যাকসিন নিয়ে যখন গবেষণা শুরু হয় তখন থেকেই বাংলাদেশ সেটা সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যতই লাগুক আমরা নিয়ে নেব। এটা নিয়ে কোন চিন্তা নেই।
সূত্র- বাসস
কেআই//

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি