যৌথ প্রচেষ্টায় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী কোবিন্দ
প্রকাশিত : ২৩:৪৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১
সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকালে একথা বলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ১৪তম ভারতীয় রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ এখন তিন দিনব্যাপী ঢাকা সফরের অংশ হিসেবে বঙ্গভবনে আজ বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি চলমান ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতীয়দের সর্বাত্মক সহযোগিতা আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকার আশ্বাস দেন। পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে জানান।
স্থল-নদী-আকাশ পথে উন্নত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে কোবিন্দ বলেন, এই কারণে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। তিনি দু’দেশের বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ খাতে আরও বিনিয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে যুদ্ধের নায়ক হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বাংলাদেশ মারাত্মক কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে এবং “আমরাও এতে গর্বিত।”
রাম নাথ কোবিন্দ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে দুই দেশকে একসাথে কাজ করতে সহায়তা করবে।
তিনি ভারতের জাতীয় দিবসের মার্চ-পাস্ট ইভেন্টে বাংলাদেশ দল এবং পরবর্তীতে ঢাকায় বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতীয় কন্টিনজেন্ট সদস্যদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন।
কোবিন্দ বলেন, এটি অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি প্রমাণ বহন করছে যখন উভয় রাষ্ট্রই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন করছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং ভারতের ফার্স্ট লেডি শ্রীমতি সবিতা কোবিন্দ এবং তাদের মেয়ে স্বাথী কোবিন্দ সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তাঁর আগমনে তার ভারতীয় প্রতিপক্ষকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান এবং রাশিদা হামিদও ভারতীয় ফার্স্ট লেডিকে আরেকটি ফুলের তোড়া উপহার দেন। পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠক করেন দুই রাষ্ট্র প্রধান।
প্রেস সচিব জানান, “সাক্ষাতের সময়, দুই রাষ্ট্রপতি দুই দেশের মধ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর উপর জোর দেন।” তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির এই সফরকে বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় বলে উল্লেখ করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, দু’টি দেশ একযোগে ঐতিহাসিক মেগা ইভেন্ট উদযাপন করছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী একই সঙ্গে উদযাপন করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, ভারত বাংলাদেশের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বন্ধু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতার কথা স্মরণ করে দেশটির সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুরু হয়েছিল তা বর্তমানে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বার্তা পাঠিয়ে এবং ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে যোগ দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, গত এক দশকে নিরাপত্তা, সীমান্ত বন্দোবস্ত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো ও যোগাযোগ খাতে দুই দেশের সম্পর্ক সম্প্রসারিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে।
বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। নারীর ক্ষমতায়ন সম্প্রসারণে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে বিষয়টি আরও বেগবান হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ডা. আব্দুর রাজ্জাক এবং সফররত ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা. সুভাষ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর, ভারতীয় রাষ্ট্রপতি উপহার হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ব্যবহৃত রাশিয়ান টি-৫৫ ট্যাঙ্ক এবং মিগ-২১ ভিনটেজ যুদ্ধ বিমানের দু’টি রেপ্লিকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করেন। পরে বঙ্গভবনের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন রামনাথ কোবিন্দ।
রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানের সাইডলাইনে, ভারতের ফার্স্ট লেডি শ্রীমতি সবিতা কোবিন্দও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা পরস্পরের খোঁজ-খবর নেন এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতির সৌজন্যে দেয়া নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারাও নৈশভোজে অংশ নেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন তারা।
এসি
আরও পড়ুন