ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪

দালাল ধরে বিদেশে না আসার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩০, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ০০:১০, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রবাসীদের কল্যাণ করার বিষয়টিকে আমরা সবসময়ই একটা দায়িত্ব মনে করি। তবে, আপনারা একটা কাজ করবেন, যারা বিদেশে আসতে চান তারা যেন দালাল ধরে না আসেন। তারা যেন বৈধভাবে আসার চেষ্টা করেন। কেননা অনেকে বাড়িঘর বিক্রী করে অনেক কষ্টে প্রবাসে পাড়ি জমালেও কাক্সিক্ষত বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়।

প্রবাসে অবৈধ পথে পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইভাবে সোনার হরিণের পেছনে ছোটার কোন দরকার নেই। তাছাড়া তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।’

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) মালদ্বীপে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।

তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে তাঁর সরকার ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছেন যার মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেই তারা বিদেশে আসতে পারেন। কাজেই বাড়ি-ঘর বিক্রী করে দালালের হাতে টাকা দেয়ার কোন দরকার নেই। বরং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধাও তারা নিতে পারবেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোন জামানত ছাড়াও এই ঋণ দেওয়া হয়, বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, যাতে করে কারো বাড়ি-ঘর বিক্রী বা বন্ধক রেখে বিদেশে আসতে না হয়, সেজন্যই তাঁর সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মালদ্বীপে যে ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে সেটা বিবেচনায় নিয়ে তার সরকার মালদ্বীপে অভিবাসী প্রত্যাশিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে দেবে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের আলোচনা হয়েছে মালদ্বীপে কি ধরনের কাজের ব্যবস্থা রয়েছে, তার একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিলে আরো ভাল কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি মালদ্বীপের যারা বাংলাদেশে চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশোনা করছে তাদেরকে বৃত্তি দেয়ারও উদ্যোগ নেবে তাঁর সরকার। 

প্রবাসীদের কল্যাণ করা তাঁর সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বর্তমানে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন তার সমাধানে তাঁর সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমি একটি সফল দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছি। অনথিভুক্ত বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ করার বিষয়টি সংলাপে প্রাধান্য পেয়েছে।’

এখানে অকস্ম্যাৎ এসে পড়ায় যারা এখনও বৈধতা পাননি সে বিষয়ে মালদ্বীপ সরকারের সঙ্গে তাঁর সরকারের এমওইউ স্বাক্ষরের প্রসংগও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশী প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সরাসরি মালদ্বীপের মুদ্রায় যাতে দেশে পাঠাতে পারেন সে ব্যবস্থাও তিনি নেবেন, যাতে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে না হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে এখানকার প্রবাসীরা যাতে দেশে টাকা পাঠাতে পারেন সে ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে দেবে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানকার বিভিন্ন দ্বীপের অভিবাসীরা যাতে বির্বিঘ্নে দেশে টাকা পাঠাতে পারেন সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে আমি বলবো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাটা করে দেবে যাতে ডলার কিনে আবার বাংলাদেশে পাঠানোতে যে লোকসানটা হয়, সেটা বন্ধ হয়।

দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোদের জন্য তাঁর সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে টাকা আপনারা পাঠান তার থেকেও বেশি টাকা কিন্তু সরাসরি আপনার পরিবার পেয়ে থাকে।

মালদ্বীপের সঙ্গে কানেকটিভির উন্নয়নে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকারের আসার পরই তাঁর সরকার বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয় এবং বেসরকারি খাতে বিমান পরিচালনারও সুযোগ সৃষ্টি করে। যে কারণে আজকে একটি বেসরকারি খাতের বিমান মালদ্বীপে আসা শুরু করেছে। সরকারী বিমানে আমরা মালদ্বীপে যাতায়াতের একটা ব্যবস্থা করবো, সেলক্ষ্য আমাদের রয়েছে।

উল্লেখ্য, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সংযোগ জোরদারে সম্মত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমান ভারতের চেন্নাই হয়ে মালদ্বীপের সাথে বিমান যোগাযোগ চালু করার বিষয়ে গতকাল দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মালদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইস্কান্ধার স্কুল অডিটোরিয়ামে, মালে চাঁদনী মাগুতে সমবেত হন। প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপে তাঁর আবাসস্থল থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীরা আপনাদের (মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশী) সঙ্গে তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর সরকার সমস্যার সমাধানে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সকলকে করোনার টিকা প্রদান করায় মালদ্বীপ সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাঁরা এখানে কোন তফাৎ করেনি, সকলকেই টিকা দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।

বাংলাদেশের পণ্যের একটি ভাল বাজার মালদ্বীপে রয়েছে এবং এখানে পণ্য রপ্তানী সম্প্রসারণেরও বিষয়েও মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তাঁর আলাপ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইতোপূর্বে মালদ্বীপে ডিস্যালাইনিটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে নৌবাহিনীর জাহাজে করে মালদ্বীপে সুপেয় পানি এবং পানি লবনাক্ততা মুক্ত করার মেশিন পাঠানোয় বাংলাদেশের উদ্যোগের 

উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাছাড়া করোনাকালিন জরুরী ওষুধ-পত্রও আমরা পাঠিয়েছি। 

আবার করোনাকালিন বিমানবাহিনীর বিমান পাঠিয়ে ১০ হাজার প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে এনেছিল তাঁর সরকার, বলেন তিনি। তাঁর সরকারের দুটি কার্গো বিমান কেনার পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি প্রবাসীদের আশ্বস্থ করেন, তাহলে আর তাদের মালপত্র দেশে পাঠাতে কোন সমস্যা হবেনা।

’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় এবং এর পর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতাকে হত্যার বিচারের পথ রহিত করায় তৎকালিন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পদক্ষেপ এবং ১৫ অগাষ্টের কালরাতে বিদেশে থাকায় বেঁচে যাওয়া তাঁদের দু’বোনকে (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) দেশে ফিরতে না দেওয়ায় ৬ বছর বিদেশে রিফিউজি জীবন যাপনে বাধ্য হবার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সরকার গঠনের পর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স রহিত করে জাতির পিতা হত্যার এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলেও যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সেটাতো আপনারা নিজেরাই জানেন। বারবার আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কতবার আমাকে বন্দি করা হয়েছে। এমনকি আমাকে ক্যান্টনমেন্টে ডিজিএফআইয়ের সেলেও নিয়ে গেছে ইন্টারোগেশন করার জন্য।

তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, জাতির পিতার মেয়ে। আমি এসবে কখনো পাত্তা দেইনি, ভয় পাইনি। আমার সব সময় একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যখন বেঁচে আছি আল্লাহর একটা ইশারা। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে আমি পারবো। এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।  

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী এবং খুনীরা সময় তৎপর আছে, তৎপর থাকবে। তাদের ষড়যন্ত্রও চলতে থাকবে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র মোকোবেলা করেই আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। ইনশাল্লাহ, জাতির পিতা স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।

জাতির পিতা সব সময় মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, উন্নত জীবন নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দিতেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমার লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করে সেই মানুষগুলোকে একটা সুন্দর জীবন দেয়া।

তিনি বলেন, এইটুকু করতে পারাই হবে আমার সার্থকতা। আর এইটুকু করতে পারলেই আমি মনে করি ষড়যন্ত্রকারীরা, যে খুনীরা আমার বাবাকে হত্যা করেছে বাংলাদেশের মানুষকে পদদলিত করে রাখার জন্য, তাদের উপযুক্ত জবাব আমি দিতে পারবো।  

এ সময় করোনা মোকাবেলায় দেশের সকল শ্রেণী পেশার জনগণকে ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার প্রণোদণা প্রদানসহ দেশব্যাপী শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ এবং দেশের সকল গৃহহীনকে অন্তত একটি করে ঘর দেওয়ার মাধ্যমে ঠিকানা গড়ে দেয়ার তাঁর সরকারের পদক্ষেপেরও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকার প্রধান বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ জাতির পিতার অনুসরণ করা এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে সকলের সঙ্গে বন্ধত্ব বজায় রেখেই তাঁর সরকার পথ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রসংগ টেনে বলেন, আমাদের দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে, আর এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবেনা। কাজেই সকলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন। কেননা আপনাদের বংশধরেরা যাতে ভালভাবে বাঁচতে পারে, চলতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়ে গেলাম।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি