‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান: প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব পাশ
প্রকাশিত : ১৭:২৫, ৬ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ১৭:২৫, ৬ এপ্রিল ২০২২
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন এ জাতির ছিল তা পূরণ হওয়ায় বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদকে এই বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করে আজ একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে।
অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ এ অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।
সমাপনী অধিবেশনে ১৯৭৫ এর ২৬ মার্চে স্বাধীনতা দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ আনুষ্ঠানিক ভাষণের অডিও-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা যে প্রত্যাশা দীর্ঘদিন এ জাতির ছিল তা পূরণ হওয়ায় বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদকে এই বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য জাতীয় সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
এবারের অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৮টি। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে ৩৫টি নোটিশ পাওয়া গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ৩৫টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এরমধ্যে তিনি ১৭টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ৮৫৭টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীরা ৫৬৩টি প্রশ্নের জবাব দেন।
এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করেন। এ অধিবেশনে ৯টি বিল পাস হয়। এ অধিবেশনে ১০টি স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপিত হয়। এছাড়া, সংসদ সদস্য শাহজাহান খান কর্তৃক কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭বিধির আওতায় আনীত প্রস্তাব (সাধারণ) এর উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শ্রদ্ধাভরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং সম্ভ্রম হারানো ২ লক্ষ মা-বোনকে স্মরণ করেন। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী বীরযোদ্ধাসহ ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদকে স্মরণ করেন। তিনি শ্রদ্ধার সাথে জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ২০২১ সাল ছিল বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্মরণীয় বছর। এ বছরেই আমরা উদযাপন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। জাতি হিসেবে আমরা ভাগ্যবান কারণ উৎসবের এমন মহামিলন, গণমানুষের এমন সম্মিলন ইতিহাসে কমই দেখা যায়।
স্পিকার বলেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সব প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। আপনাদের প্রাঞ্জল আলোচনা সংসদকে প্রাণবন্ত করেছে। জনগণের প্রতিনিধি হয়ে আপনারা আপনাদের বক্তব্য প্রদান করেছেন- যা সংসদীয় কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করেছে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। আশাকরি এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও উন্নয়নের মত মৌলিক প্রশ্নে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।
তিনি বলেন, ‘আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াসহ সংসদীয় অন্যান্য কার্যক্রমে আপনাদের সহনশীল আচরণ ও গঠনমূলক আলোচনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়। রাষ্ট্র পরিচালনায় সঠিক দিক নির্দেশনা, গতিশীল নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের জন্য গৌরব ও সম্মান বয়ে আনার জন্য আমি সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সরকারের হাতে নেয়া রূপকল্প ২০২১-এর সফল বাস্তবায়ন শেষে এবারে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত পরিবর্তন বিবেচনা করে প্রণীত বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর আওতায় বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে সামিল হতে চাই। এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরণ পরবর্তী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ তথা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করাই মূল লক্ষ্য।
সংসদ পরিচালনায় সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান। এরপর স্পিকার অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করার মধ্য দিয়ে অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এসি
আরও পড়ুন