ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইফতারে কী খাচ্ছি? (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২২, ১৫ এপ্রিল ২০২২

বেশিরভাগ হোটেল-রেঁস্তোরায়, প্রায় প্রতিটি মুখরোচক-সুস্বাদু ইফতার দ্রব্য তৈরি হয় অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। বাইরে থেকে কেনা ইফতারে আসলে আমরা কি খাচ্ছি? 

শৃঙ্খলা তথা নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলনের মাস, পবিত্র রমজান। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত খাদ্য গ্রহণে বিরতির পর- ইফতার। বিপত্তিটা ঠিক এখানেই। অনেকেই তখন আর সংযমী থাকেন না। 

মাত্রাতিরিক্ত ভাজাপোড়া, মশলাদার, তেলযুক্ত ও রঙিন খাবারে কাহিল হয়ে পড়ে তাই শরীর। রোগ বাসা বাঁধার ঝুঁকির সাথে সাথে ব্যহত হয়, সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্যও। 

আহছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক শাঈখ মুহাম্মদ উছমান গনী বলেন, "ইফতারে যে বাহারি আয়োজন করা হয় এটি কিন্তু সুন্নাহর আদর্শ এবং রোজার দর্শনের সাথে যায় না।"

এদিকে এবিষয়ে ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এন্ড নিউট্রিশনিস্ট তামান্না চৌধুরী বলেন, পরিমিত খাবার গ্রহণ না করায়, ডায়বেটিস, কিডনিরোগ, হৃদরোগ, গ্যাসের সমস্যাসহ নানান শারিরীক সমস্যা দেখা যায়। আবার, একাধিক মাত্রাতিরিক্ত ডাল জাতীয় খাবার বাড়িয়ে দেয়, ইউরিক এসিড। 

তিনি বলেন, " এই একটা মাসের উল্টা পাল্টা খাবারের কারণে শরীরের যে ক্ষতি হবে তা কিন্তু বহন করতে হবে পরবর্তি অনেক দিন ধরে।"

রমজানে রাজধানীসহ প্রায় সব শহরেই জমজমাট হয়, ইফতারী বাজার। একটি বারও কি ভেবেছি বাইরের তৈরি ইফতার সামগ্রী কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন? 

রাজধানীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট। চোখকাড়া রঙ। সেই মিশ্রণে ভাজা হচ্ছে, বুন্দিয়া। ঠিক নিচেই মিষ্টি শিরা। মশলার সাথে ভাসছে, মৃত মাছি। ক্যামেরায় ছবি ধরা পড়ামাত্রই তুলে ফেলা হলো। এটাই না কি স্বাভাবিক ব্যাপার। আর পাশে মাছির ভন-ভন তো আছেই। 

বাবুর্চি বলছেন, গরম শিরা, দুই একটা মাছি পড়তেই পারে।"

রান্নাঘরের ভেতরটাও একেবারে অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে-ঘিঞ্জি পরিবেশ। কাটাকুটি, ধোয়া-মোছা রান্না সব এই ছোট্ট কক্ষেই। তাও নাকি তা পরিচ্ছন্ন, বলছেন মূল বাবুর্চি। 

রাস্তার পাশের দোকানগুলো আরো নাজুক। একে তো ড্রেনের উপর চুলা, সড়কের ধুলোবালি সমানে মিশছে, কড়াইয়ে। একই তেলে বারবার ভাজা হচ্ছে, জিলাপি, চপ, বড়া, বেগুনি- আরো কত কি? রঙ কালো না হওয়া অবধি একই তেলের ব্যবহার হতেই থাকে। 

বাবুর্চি বলছেন, "একদিন ব্যবহারের পর কিছু শিরা ও তেল থেকে যায়, তাই পরদিন সেটা একটু ব্যবহার করি।"

শংকার জায়গাটা আরো ভয়ংকর। কারণ, ডাল, হলুদ, লবণ, মরিচের গুড়াসহ অনেকগুলো খাদ্য উপকরণ ভেজাল যুক্ত। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউিটের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বাজারে ১০ শতাংশ খাদ্যের মান ঠিক নেই। এমন বাস্তবতায় ভেজাল উপকরণে এই খাদ্য কতটা ক্ষতিকর সেটার কোন পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে নেই। 

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, "যে ধরনের ডায়রিয়া রোগী পাচ্ছি এবং রোজার শুরুতে তার সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে আমাদের মনেই হচ্ছে যে এর সাথে বাইরের অনিরাপদ ভাজাপোড়া ইফতারের যোগ রয়েছে।"

ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এন্ড নিউট্রিশনিস্ট তামান্না চৌধুরী বলেন, "রঙিন যেসব খাবার, টেস্টিংসল্ট যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত মাত্রায় বিট লবন ব্যবহার করা হচ্ছে এসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। "

সিদ্ধান্তটা তাই একান্তই রোজাদারদের। সিয়াম সাধনায় সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের সঙ্গে সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন, নাকি রোগ-শোকে ভূগবেন?

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি