রবিন শ্যামের নকশায় পদ্মাসেতু, যুক্ত ২০ দেশের বিশেষজ্ঞ (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:৪৪, ২৩ জুন ২০২২ | আপডেট: ১৫:৫৮, ২৩ জুন ২০২২
শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে দৃশ্যমান পদ্মাসেতু। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে থাকলে যে মানের সেতু তৈরি হতো, তারচেয়েও উন্নত সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। বজায় রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ মান। নিজের টাকায় নিজেদের সেতু নির্মাণ যেমন একদিকে জাতীয় গৌরবের, তেমনি উন্মুক্ত হয়েছে বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার।
এক টাকাও ছাড় না করে পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগ করেছিল বিশ্বব্যাংক ও তার এ দেশীয় কূশীলবরা। অভিযোগটির সত্যতা খুঁজতে তদন্তে সকল রকমের সহযোগিতা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অভিযোগটি প্রমাণ করতে পারেনি অভিযোগকারীরাই। উল্টো যারা দেশপ্রেমিক এই সেতুটি বানাতে চেয়েছিল তাদেরকে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কন্সালটেন্সির প্রলোভন দেখিয়েছিল। এতদিনে সেসকল ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস হয়েছে।
বিশ্ববাসী জানে আসলে কি ঘটেছিল এই পদ্মাসেতুতে। সকল রকমের ষড়যন্ত্রের নাকপাশ ছিন্ন করে এই সেতু নির্মিত হয়েছে। সারাবিশ্বে জানান দিয়েছে বাংলাদেশের সক্ষমতা।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, “তারা আমাকে বিদেশে ওয়ার্ল্ডব্যাংক বা এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে কন্সালটেন্সির পদের প্রলোভন দিয়েছিল। আমি যে বেতন চাই সেই বেতনই তারা ব্যবস্থা করবে।”
একটি সেতু যখন হয়ে উঠে জাতির আত্মমর্যাদার প্রশ্ন? তখন, এই যুদ্ধের প্রস্তুতি সহজে অনুমেয়। তবে বাস্তবে তা ছিল আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত। ষড়যন্ত্রের জল যখন ঘোলা হচ্ছে, তখন সেতুর বিশদ নকশা, বিশেষজ্ঞ, কারা কারা কাজ করবে- প্রায় সবই প্রস্তুত ছিল।
পদ্মাসেতুর মত বিশাল একটি অবকাঠামো নির্মাণের কৌশলগত নানা চ্যালেঞ্জ আসবে তা জানাই ছিল। কিন্তু তারচেয়েও বড় প্রশ্ন ছিল অর্থের সংস্থান। সংকটকালের সাহসী সমাধান দিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জড়ো করা হলো পদ্মাসেতু নির্মাণযজ্ঞে।
পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক পরামর্শক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “কন্ট্রাক্টারের ফ্রি কোয়ালিফিকেশন, কি ধরনের মেটারিয়াল ব্যবহার করা হবে- এইসব কিছু নির্ধারিত হয়ে যায় যখন বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে এডিবি, ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা জড়িত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, এখানে কোন কমপ্রোমাইজ করা যাবে না। কিন্তু বিশ্বব্যাংক থাকলে যে গুণাগত মান অর্জন করতে হতো আন্তর্জাতিক মানের, সেই মান আমরা অর্জন করতে পেরেছি।”
মোট পাঁচ ভাগে বিভক্ত ছিল পদ্মা সেতু প্রকল্প। সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এড়িয়া নির্মাণ কাজ তখন এগিয়েছে অনেকটা। বাকি ছিল মূল সেতু আর নদী শাসনের কাজ। উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক টেন্ডারে সে কাজও পেল চীনের রাষ্ট্রীয় দুই প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ও সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন।
ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “ডিজাইন হয়েছে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, নির্মাণ হয়েছে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী।”
পদ্মাসেতু আন্তর্জাতিক পরামর্শক বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামিম জাহান বসুনিয়া বলেন, “সেতু তো আমাদের দেশে থেকে যাবে, যারা বানিয়েছে তারা চলে যাবে। ডিজাইনে সবকিছুই দেওয়া ছিল, স্ট্রাকচার রুলস অনুযায়ী সবকিছুই হয়েছে।”
এরপর গড়িয়েছে পদ্মার জল; এগিয়েছে সেতুর কাজ। নদীর তলদেশ থেকে উপরে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যামের নকশায় গড়া পদ্মা সেতু।
এটা ঠিক প্রকৃতি বিরুপ ও প্রকৌশলগত সংকট এসেছে। কাজও থেমে ছিল সমাধান খুঁজতে। কিন্তু পাহাড় ডিঙ্গিয়ে এগিয়েছে পদ্মা।
পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “এই টিমটা ভেরিগুড টিম। আর আমরা পরবর্তী পর্যায়ে যখন কাজ করতে যাই তখন কোথায় কোন ভাললোক পাওয়া যায়, যে পোস্টে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, অভিজ্ঞতা বেশি সেটা ইম্পিলিমেন্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।”
চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ২০টি দেশের বিশেষজ্ঞরা সরাসরি যুক্ত থেকেছে সেতু নির্মাণে। বিপুল পরিমাণ উপকরণ এসেছে ১০টি দেশ থেকে এবং কিছু না কিছু উপকরণের ব্যবহার হয়েছে ৫০টি দেশের।
এএইচ
আরও পড়ুন