ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভারত সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তুলবেন প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৩, ২৯ জুন ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তার আসন্ন ভারত সফরে বিভিন্ন আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গও তুলবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রেণে এ বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রতিবেশী দেশটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। 

ভারতের বার্তা সংস্থা এনএনআইর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে বাংলাদেশ যে বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়ছে সফরে সে বিষয়টি তুলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মৌলবাদ বৃদ্ধি মাদক ও মানব পাচারের বিষয়ও স্থান পাবে আলোচনায়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মোমেন বলেন, “আমাদের জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান হচ্ছে তাদেরকে মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরত পাঠানো। আমার বিশ্বাস, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ভারত কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই শরণার্থী সংকটকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড়, দ্রুত বর্ধমান সংকটগুলোর একটি বলা হচ্ছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে বলেছি, ১০ রোহিঙ্গার এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু মানিবক সহায়তাই যথেষ্ট নয়, একই সঙ্গে এই সঙ্কটের একটি টেকসই সমাধানও প্রয়োজন। আমাদের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান হলো রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো।”

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমারের সাথে আলোচনা করেছি। কিন্তু মিয়ানমার সম্মতি দিলে অন্য দেশগুলোও সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারে। 

“মিয়ানমার ও বাংলাদেশের অভিন্ন প্রতিবেশী ভারত। আমরা এ বিষয়ে অতীতের মতো আবারও ভারতকে অনুরোধ করব যেন তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে তারা যখন মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যাবে।”  

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই জীবিকার পাশাপাশি বসবাসের মতো উপযোগী পরিবেশ পেলে রোহিঙ্গা তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে হয়তো কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হবে এবং মিয়ানমার সম্মত হলে ভারত সেই সহায়তা করতে পারে এবং এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য চিত্র বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা।”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে গত বছর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনার কথা স্মরণ করেন মোমেন। 

“আমি নিশ্চিত, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে ভারত কিভাবে সহায়তা করতে পারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন।”

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগিরক বর্তমানে কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শারণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে আছে। শরণার্থীদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেন, “কক্সবাজারের এই জায়গাটি (কুতুপালং) খুবই ছোট। আমরা রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাষানচরে স্থানান্তরের মাধ্যমে জায়গাটির ওপর থেকে চাপ কমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এটিও সাময়িক ব্যবস্থা।”

এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর অনেকেই মাদক, মানব পাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ছড়ানোর শঙ্কাও রয়েছে।  

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৬০ শতাংশের বেশি তরুণ। তাদের মধ্যে ধর্মীয় মৌলবকাদ ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে এবং সেটি হলে শুধু বাংলাদেশই নয়, এ অঞ্চলের জন্যই মাথাব্যথার কারণ হবে। এছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড মাদক ও মানব পাচার এবং আন্দামান সাগরের কাছেও আমরা বেশকিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেখেছি।”

কক্সবাজার জেলা পুলিশের বরাত দিয়ে এএনআই জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হলো- হত্যা, মাদক ও মানব পাচার, অস্ত্র ও সোনা চোরাচালান, ধর্ষণ, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা। 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সেখানেও তুলে ধরে বিশ্বের সমর্থন চাইবেন তিনি।
এএইচএস/ 
   
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি