২০৩০ সাল পর্যন্ত গাছ না কাটার আহ্বান বনমন্ত্রীর
প্রকাশিত : ১৭:০০, ২৪ জুলাই ২০২২
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন ২০৩০ সাল পর্যন্ত বনের কোন বৃক্ষ না কাটার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে বনের গাছ কর্তন বন্ধ না হলে আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
তিনি এসময় বন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বনরক্ষকদের এই নির্দেশ নিশ্চিতে কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
মন্ত্রী বলেন, আগে মানুষ কম ছিল, বন বেশি ছিল। তবে এখন হিসেব বদলেছে। বনে বসবাস করা আদিবাসিরাও বনের ভেতর বড় জনপদ গড় তুলছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের বনের পরিমাণ ১৪.২ শতাংশ। আমাদের প্রয়োজন ২৫ শতাংশ বনায়ন। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বনায়নের যে লক্ষ্য, তা অর্জনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত পাহাড় ও বনের গাছ কাটা যাবে না। তিনি এসময় টিলা কাটা ও নদীভরাট বন্ধ করে অধিক হারে বৃক্ষরোপণের জন্য সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২২ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষ্যে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপপ্রধান বন সংরক্ষক মোঃ মঈনুদ্দিন খান এবং নির্বাচিত স্টল মালিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বৃক্ষমেলায় প্রথম স্থান অধিকারী বরিশাল নার্সারির মালিক মোঃ ইব্রাহিম।
শাহাব উদ্দিন বলেন, দেশে সবুজ আচ্ছাদন তৈরিপূর্বক টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিবছর আয়োজিত বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষরোপণ অভিযান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, এ বছর শেরে বাংলা নগরস্থ মাঠে আয়োজিত জাতীয় বৃক্ষমেলায় সর্বমোট ১৬ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি চারা বিক্রি হয়েছে। দেশের সকল বিভাগ ও জেলাতে এবং বেশ কিছু উপজেলাতেও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে। দেশব্যাপী আয়োজিত এ বৃক্ষমেলায় বিক্রয় ও রোপণ করা হচ্ছে কোটি কোটি বৃক্ষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন ও প্রতিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমকে বৃক্ষরোপণ অভিযানে রূপ দেয়া হয়েছে। সকলের অংশগ্রহণে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এসডিজি'র লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
বনমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসাবে বনের জবরদখল উচ্ছেদ, বৃক্ষহীন ও অবক্ষয়িত বনভূমি, প্রান্তিকভূমি এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, ২০০৯-২০১০ হতে ২০২০-২১ আর্থিক সাল পর্যন্ত ম্যানগ্রোভসহ ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৭৮ হেক্টর ব্লক, ২৬ হাজার ৪৫৩ সিডলিং কি.মি. স্ট্রিপ বাগান সৃজন এবং বিক্রয় বিতরণের ১০ কোটি ৫৯ লক্ষ চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। একই সময়ে সামাজিক বনায়নে সম্পৃক্ত ১ লক্ষ ৪১ হাজার ২৩৮ জন উপকারভোগীর মাঝে লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে। বিগত ৩ বছরে বন অধিদপ্তর কর্তৃক ৪ হাজার ৭২৯ হেক্টর বনভূমি জবরদখল মুক্ত করে বনায়ন করা হয়েছে। মন্ত্রী বন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের বন রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী "বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০১৯ ও ২০২০" এবং সামাজিক বনায়নের ৬ জন উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের ৩৭ লক্ষ টাকার চেক, নির্বাচিত স্টল মালিকদের এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য, এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলায় মোট স্টল ছিলো ১১০টি। এর মধ্য ৮০টি স্টলে ৬৩টি ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারী, ১৫টি স্টলে ৩৮টি সরকারী প্রতিষ্ঠান, ০৬টি স্টলে ৪টি বেসরকারী সংস্থা এবং ০৯টি স্টলে ২টি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এ বছর জাতীয় বৃক্ষমেলায় মোট ১২ কোটি ৪২ লক্ষ ৩০ হাজার ২৪২ টাকার চারা বিক্রয় হয়। এ বছর জাতীয় বৃক্ষমেলায় মোট বিক্রিত চারার সংখ্যা এবং বিক্রয়মূল্য পূর্বেকার যে কোন বছরের তুলনায় বেশি।
এসি
আরও পড়ুন