বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের নীরব সারথী বঙ্গমাতার জন্মদিন আজ
প্রকাশিত : ২৩:৫৯, ৭ আগস্ট ২০২২
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মদিন আজ। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে যার অসামান্য অবদান।
টুঙ্গিপাড়ার সেই ছোট্ট ‘খোকা’র স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হয়ে ওঠার পেছনে যিনি সাহস, অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়ে গেছেন, তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। পারিবারিক জীবনে মা-বাবার পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে স্ত্রীর বিরাট ভূমিকা ছিল। প্রদীপের সলতের মতো জ্বলে আজীবন স্বামীকে সাহস জুগিয়ে গেছেন, দিয়েছেন অনুপ্রেরণা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। যা অনস্বীকার্য। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করেছেন তার ‘প্রিয় রেণু’।
লড়াই-সংগ্রামে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অপার ধৈর্য্য আর সাহসিকতায় শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আগলে রেখেছিলেন পরিবার এবং দলের নেতাকর্মীদের। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের নীরব সারথী ছিলেন।
১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা। তাঁর ডাক নাম ছিলো 'রেণু'। বাবা শেখ জহুরুল হক ও মা হোসনে আরা বেগম। ৫ বছর বয়সেই বাবা-মাকে হারান ছোট্ট রেণু।
অল্প বয়সেই বিয়ে হয় শেখ মুজিবের সঙ্গে। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী ছিলেন না, ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর; বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে সহযোদ্ধার ভূমিকা ছিলো তাঁর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সন্তানদের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদেরও আগলে রাখতেন পরম মমতায়। নিজ গুণেই তিনি হয়ে উঠেন বঙ্গমাতা।
ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। ছায়ার মত অনুসরণ করেছেন প্রাণপ্রিয় স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে। এই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য অবদান রেখেছেন। জীবনে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, এজন্য অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ডাকসুর ভিপি এবং রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব হিসেবে কাজ করার সুবাদে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ। তিনি বেগম মুজিবকে বর্ণনা করেন একজন ‘মহিয়সী নারী’ হিসেবে।
তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু যেমন সমার্থক, তেমনি বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ছিলেন সমার্থক। জীবনে-মরণে তারা ছিলেন একে অপরের পরিপূরক।’
তিনি বলেন, ‘বেগম মুজিব সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন, সেটা হোক সুখে, হোক দুঃখে। সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবন বা ঝুঁকিমূলক কোনও কাজে তাকে বাধা দেননি, বরং পাশে পাড়িয়েছেন ভরসা আর আশ্রয় হয়ে। জাতির জনক জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন আর পরিবার সামলেছেন বেগম মুজিব। কিন্তু কোনও দুঃখবোধ বা অভিযোগ তার ছিল না।’
তোফায়েল আহমেদ জানান, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব থাকাকালে তিনি প্রতিদিন সকালে তাদের বাসায় যেতেন, সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সচিবালয়ে যেতেন, সচিবালয় থেকে ৩২ নম্বর হয়ে বাসায় ফিরতেন। কোনোদিন বেগম মুজিবের মুখ হাসি-ছাড়া দেখেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেন এভাবে যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারাগরে গেলে তৎকালীন বিখ্যাত আইনজীবী সালাম খানের কাছে জামিনের জন্য যান বেগম মুজিব। তাকে মামলার কাগজপত্র দেওয়ার পর সালাম খান বলেন, ‘কাগজপত্র দিলেন, আর তো কিছু দিলেন না। তখন বেগম মুজিব বলেন- আমি সেটা দিতে বিব্রতবোধ করছি, গাজী গোলাম মোস্তফাকে পাঠাবো। পরে নিজের গহনা বিক্রি করে সে টাকা গাজী গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে পাঠান বেগম মুজিব।’
বেগম মুজিবের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত স্মৃতি উল্লেখ করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর ঢাকায় ফিরলে বেগম মুজিব যে ভালোবাসা আর দরদ দিয়ে তাকে শান্ত্বনা দিয়েছিলেন, তা জীবনে ভুলবার নয়।’
তার এলাকার থানায় ফোন করে ডেকে নিয়ে দুই ছেলের বিয়েতে তার অনুপস্থিতিতে শুন্যতা অনুভব করবেন বলে বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব তাকে যে কমপ্লিমেন্ট দিয়েছিলেন তা তোফায়েল আহমেদ তার জীবনের অন্যতম মূল্যবান স্মৃতি বলে উল্লেখ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব- অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, অপার সাহস আর ত্যাগের উদাহরণে ইতিহাসের পাতায় থাকবেন অক্ষয় নাম হয়ে।
কেআই//
আরও পড়ুন