চা শ্রমিকদের কথা শুনলেন প্রধানমন্ত্রী, দিলেন ঘরের আশ্বাস
প্রকাশিত : ১৭:৫১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৮:৪২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
চার জেলার চা শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট আর নানা দাবি-দাওয়ার কথা শুনলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের দিয়েছেন আশ্বাস।
বিশেষ করে শ্রমিকদের সবাই নিজ নিজ ঘর পাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
চা শিল্প যেন ধ্বংস না হয় সেজন্য মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পকে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দেওয়া হবে না।
মজুরি বাড়ানোর পর চা শ্রমিকদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার। তাদের সেই দাবিতে সাড়াও দেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই অনুযায়ী শনিবার বিকালে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তাদের কথা শোনেন।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মৌলভীবাজারের পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তাকে স্বাগত জানান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
পাত্রখোলা চা বাগানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।
চা শ্রমিকদের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “বঙ্গবন্ধু চা শিল্পকে জাতীয়করণ করেননি, বরং নানাভাবে প্রণোদনা দিয়েছেন, যাতে এই শিল্পটা ভালোভাবে গড়ে উঠতে পারে। জাতির পিতা চা শ্রমিকদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেন। তাদের ভোটাধিকারও দেওয়া হয়। চা শিল্পের উন্নতির জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বিনামূল্যে বাসভবন, সুপেয় পানি, রেশন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক সময় চা শ্রমিকদের অন্যভাবে ব্যবহার করা হতো। বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের ফলে তারা অধিকার ফিরে পায়।”
সরকার চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চা শ্রমিকরা আমাদের দেশেরই নাগরিক। কিন্তু এক সময় তাদের নাগরিকত্ব ছিল না। এক সময় তাদের নাগরিকত্ব ছিল না। ঘরবাড়ি ছিল না। যেহেতু চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকা মার্কায় ভোট দেন, সেহেতু আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সমস্যাগুলো দূর করতে।”
সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে আন্দোলন হয়েছে। আমি সেই সময় মালিকদের সঙ্গে বসে আপনাদের দৈনিক মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ করি। আমার মনে হয় সেখানে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী করতে পেরেছি।”
চা-শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “ব্রিটিশরা আপনাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এসেছিল। তখন আপনাদের কোনও নাগরিক অধিকার ছিল না। কোনও সুযোগ-সুবিধা ছিল না। আজ আপনারা এদেশের নাগরিক। বঙ্গবন্ধু আপনাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। তার কন্যা হিসেবে আপনাদের প্রতি আমার একটি দায়িত্ব রয়েছে। আমি চেষ্টা করি সবসময় এই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে। মালিকরা যাতে আপনাদের যথাযথভাবে মর্যাদা দেয় ও দেখে সেই উদ্যোগ নিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “চা শিল্প আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। চা বাগান দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এই চা শিল্প আমাদের অর্থখাতের জন্যও ভীষণ দরকারি। তাই এই চা শিল্প যেন ধ্বংস হয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আমি আমার সব চা শ্রমিক ভাইদেরও অনুরোধ জানাব এই চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।”
ইতোপূর্বে চা-শ্রমিকদের দেওয়া স্বর্ণের চুড়ি উপহার পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা গণভবনে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপহার নিয়ে এসেছিলেন। সেই উপহার এখনও আমি হাতে পরে বসে আছি। আমি কিন্তু ভুলিনি। আমার কাছে এটা হচ্ছে সব থেকে অমূল্য সম্পদ। চা-শ্রমিক ভায়েরা চার আনা-আট আনা করে জমিয়ে আমাকে এই উপহার দিয়েছেন। এত বড় সম্মান, এতবড় উপহার আমি আর কখনও পাইনি।”
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ অগাস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রথম চারদিন শ্রমিকরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। ১৩ অগাস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা।
টানা ধর্মঘটের মধ্যে ২০ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে মজুরি বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার ঘোষণার পর সুরাহার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ওইদিন শ্রমিক ইউনিয়ন কাজে ফেরার ঘোষণা দিলে কয়েকটি বাগানে শ্রমিকরা কাজে নেমেছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ শ্রমিক এ মজুরি না মেনে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
আন্দোলনের ১৯তম দিন ২৭ অগাস্ট গণভবনে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ)সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের পর নতুন মজুরির ঘোষণা আসে। এরপর শ্রমিকরা নিজ নিজ বাগানে কাজে ফিরেছেন।
এএইচএস
আরও পড়ুন