ঢাকা, শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উপকূল পেরিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং, ৯ ফুটের জলোচ্ছ্বাস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:০৪, ২৫ অক্টোবর ২০২২ | আপডেট: ০২:১০, ২৫ অক্টোবর ২০২২

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কেন্দ্র বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। সোমবার মধ্যরাতের দিকে ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

রাত সোয়া ১২টায় আবওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কেন্দ্র বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। এখন এটি সামনের দিকে যাচ্ছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ভোলার পাশ দিয়ে রাত ৯টার দিকে সিত্রাংয়ের কেন্দ্র উপকূলে প্রবেশ করে। এর অগ্রভাগ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপকূলে আঘাত করে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল ও কক্সবাজারসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। 

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া জানান, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যায় উপকূলে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৯ ফুট (৩ মিটার) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। 

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সময় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

ঝড়ের তোড়ে উপড়ে গেছে অনেক গাছপালা, সেই সঙ্গে পড়ে গেছে ঘরবাড়ি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গত রাত থেকে আঁধারে ডুবে আছে অনেক এলাকা। ভারি বৃষ্টিতে নিমজ্জিত অনেক অঞ্চল। আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌ চলাচল। উড়োজাহাজ ওঠানামায় লাগাম টানা হয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও যশোর বিমানবন্দরের। গাছ পড়ে বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড়ের ধাক্কা এসে লেগেছে রাজধানীতেও। দিনরাত ঝরছে বৃষ্টি। রাতে বয়ে গেছে ঝোড়ো হাওয়া। দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

রাজধানী ঢাকা, ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাসন, বরগুনা, কুমিল্লা এবং নড়াইলের লোহাগড়ায় ঝোড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে ৯ জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। 

গণভবনে বসে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকার সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সংশ্নিষ্ট সবাইকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

উপকূলজুড়ে আতঙ্ক, ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা : 

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের নদনদী ফুলেফেঁপে প্লাবিত হয়েছে চর ও নিম্নাঞ্চল। ফলে গতকাল দুপুর পর্যন্ত মানুষ বাড়িঘরে থাকলেও সবকিছু গুছিয়ে বিকেল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাওয়া শুরু করে। অনেকে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে আসতে দেখা গেছে। উপকূলের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্বল হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট। এতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।
খুলনার কয়রায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। এতে বাঁধের কানায় কানায় ওঠে গেছে পানি।

পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে। এতে পটুয়াখালীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।
চট্টগ্রাম নগরের উপকূলীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকার ওয়ার্ড পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী, লালখানবাজার, পাহাড়তলী এলাকায় ৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। চট্টগ্রামে খোলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র। বাঁশখালীর ৩৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১৫ কিলোমিটারের বেশি অরক্ষিত উপকূলীয় এলাকা খানখানাবাদ, কদমরসুল, প্রেমাশিয়া, বাহারছড়া ও ছনুয়ার বাসিন্দারা ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসেরও আতঙ্কে রয়েছেন। আনোয়ারার ১০ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধের কয়েক কিলোমিটার অরক্ষিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকায় বেড়িবাঁধের অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সীতাকুণ্ডের ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় আড়াই কিলোমিটার অরক্ষিত। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এলাকার আকিলপুর, বোয়ালিয়ারকুল ও জমাদারপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। 

সন্দ্বীপের ৫৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অধিকাংশই অরক্ষিত। সন্দ্বীপের সারিকাইত, মগধরা, আজিমপুর, রহমতপুরসহ দক্ষিণ সন্দ্বীপের অন্তত ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বেস হ কিছু পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এসময় জনমনে আতঙ্ক সৃতি হয়। তবে বেশ কিছু মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আরও একটি নির্ঘুম রাত পার করল খুলনা উপকূলের মানুষ। সকাল থেকে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বিকেলের পর থেকে আরও গতি পায়। এর সঙ্গে নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মাঝে। অনেক এলাকায় বৃষ্টিতে ভিজে বাঁধ রক্ষায় কাজ করেছেন গ্রামের মানুষ। খুলনায় ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনা নগরীর নিম্নাঞ্চল। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েন মানুষ।

অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার মধ্যবর্তী অর্ধশতাধিক চর ও বেড়িবাঁধের বাইরের ঘরবাড়ি।নোয়াখালীর হাতিয়ায় ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বরগুনায় পায়রা নদীতে পানি বাড়ার ফলে নদী তীরবর্তীসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম তলিয়ে গেছে। পায়রা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বেড়িবাঁধের বাইরের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলার কৃষিজমি ডুবে গেছে। বিশেষ করে, আমন ধান ও শীতকালীন সবজি ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এক কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন, বিঘ্নিত হচ্ছে মোবাইল সেবাও: ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলবর্তী জেলাগুলোর প্রায় এক কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, খুলনা, বরগুনা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, নড়াইলের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৩১টি সমিতির আওতাধীন অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ভোলাসহ কয়েকটি জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি