আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনো ভুলবে না: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১৫:০৮, ২১ নভেম্বর ২০২২
আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনো ভুলবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে দেশকে গড়ে তুলছে।
তিনি বলেন, "এদেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের যে অবদান তা কখনই আমরা ভুলিনা। তাই আমরা বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে আজ সোমবার ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনীর খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, "তারা অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান করছেন এবং তাদের সুবিধাগুলি যেমন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিশ্চিত করতে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।"
একটানা ৩ বার ক্ষমতায় থাকতে পেরেছেন বলেই মানুষের জন্য কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যেসব মুক্তিযোদ্ধা একেবারে অবহেলিত পড়েছিল সরকার তাদের খুঁজে বের করে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁদের ভাতার ব্যবস্থা করা, মারা গেলে রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যবস্থা এমনকি তাঁদের দাফনের ব্যবস্থাও আমরা করছি।"
তিনি বলেন, ‘যারা আমার বাবার ডাকে অস্ত্র তুলে নিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন তাদের সম্মান করা, মর্যাদা দেওয়াই আমাদের কাজ। দল মত পৃথক থাকতে পারে কিন্তু তাদের অবদান আমি কখনো ছোট করে দেখিনি, অবহেলা করিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) অবদান চিরকাল মনে রাখব। আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় কাজ করছি।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম যদি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি দেখে বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে, তাহলে তারা অনুপ্রাণিত হবে এবং জানবে কীভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার প্রতিটি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করছে এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেখানে জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা ও পাকিস্তানি দখলদারিত্বের পর দেশ পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে সেটি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নিয়েছে।
তিনি বলেন, কেউ কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করবে না। ভবিষ্যতে কেউ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে অবহেলার চোখে দেখবে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে তাঁর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছে এবং এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অব্যাহত থাকবে।
তাঁর সরকারের টানা ১৪ বছরের শাসনামলে আজকে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ এর নির্বাচনে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম তা করতে পেরেছি। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং সেই সময়ই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুণর্গঠনকালে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ এর বাংলাদেশ কেমন হবে তার প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা প্রণয়ন করেছি এবং তারই ভিত্তিতে আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রজন্মের পর পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার প্রণীত শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের প্রত্যেক গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে বিশ^বাসী আর অতীতের মত বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখেনা উল্লেখ করে চলমান বিশ্ব মন্দা মোকাবেলায় দেশের সকল পতিত জমিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কোভিড-১৯ পরবর্তী রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনে উন্নয়নের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। কারণ এর ধাক্কায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও হিমসিম খাচ্ছে।
তিনি বলেন, যেসব জিনিস আমদানী করতে হয় যেমন ভোজ্য তেল, জ্বালানি তেল, গম ভুট্টা সেগুলোর দাম যেমন বেড়েছে তেমনি পরিবহন ব্যয়ও অনেকাংশে বেড়ে গেছে। তারপরও সরকার থেমে নেই। সরকার এগুলো অতিরিক্ত মূল্যে কিনে দেশের জনগণকে দেয়ার চেষ্টা করছে এবং উন্নয়ন অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে, উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা যেন এই অর্থনৈতিক মন্দাটাকাটিয়ে চলতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুণর্গঠন কালে জাতির পিতার ‘এদেশের মাটি ও মানুষ দিয়েই এদেশকে গড়ে তোলার’ প্রত্যয়ের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, এ আমিও বিশ্বাস করি এই মাটি ও মানুষ দিয়েই এদেশ যে আমরা গড়তে পারি তা আমরা প্রমাণ করেছি।
দেশে বিদেশে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারীদের সম্মাননা দেয়ার কথা ঊল্লেখ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, অন্তত এটুকু কাজ আমি করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ আর অসম্মানের চোখে দেখবেনা। আর কখনের কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাঁদের পরিবারকে অবহেলা করবেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার যেন তাঁদের সম্মান নিয়ে চলতে পারে।
পিতা-মাতা-ভাইসহ স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: বাসস
এসবি/
আরও পড়ুন