ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ধর্মের নামে বিভ্রান্তি দূর করবে মডেল মসজিদ: প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো থেকে জনগণ ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করবে, যা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নারী নির্যাতন বন্ধে ব্যাপক অবদান রাখার পাশাপাশি ধর্মের নামে বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, “আমরা মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছি, কারণ, এতে ইসলামের নামে কেউ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না এবং তাদের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার সকালে গণভবন থেকে সারা দেশে ভার্চুয়ালি আরও ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মডেল মসজিদে ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা হবে, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান আরো বাড়বে, ইসলামী সংস্কৃতি লালন ও বিকাশের আরো সুযোগ থাকবে এবং ইসলাম ধর্মকে আরো উন্নতভাবে পালনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সরকার চলে বলেই ইসলাম ধর্ম এবং শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় এবং দীর্ঘদিনের দাবিপূরণ করে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে, ইসলামিক আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, তাছাড়া প্রতিটি উপজেলা ও জেলা সদরে একটি করে মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে।

“ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ যেন মানুষকে বিপথে নিতে না পারে, প্রকৃত ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে মানুষের মাঝে যেন সচেতনতার সৃষ্টি হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখেই এই মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প আমরা নেই এবং নির্বাচনী ইশতেহারেও সেটার ঘোষণা দেই,” বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পটির মূল লক্ষ এবং উদ্দেশ হচ্ছে মুসল্লীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রমের সুবিধাদি সৃষ্টি করা, সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার নীতি নির্ধারণের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীনভাবে ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ঘটানো। এছাড়া, এখানে একটি লাইব্রেরিও থাকবে। কেননা ইসলাম ধর্মের ভাতৃত্ব এবং সাম্যের প্রচার এবং প্রসারও এর একটি অন্যতম লক্ষ্য।

তিনি বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদগুলোতে ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।

এছাড়া হাজীদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষ ও থাকবে। ইসলামিক দাওয়াত, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, দেশী-বিদেশী অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধাও এখানে থাকছে।

তিনি এর আগে ৫০টি এবং আজকে আরো ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে পারায় মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সূরা তওবার ১৮ নম্বর আয়াতের বাংলা তরজমা উচ্চারণ করে বলেন, আমি এটুকুই বলবো আমাদের এই ধর্ম নিয়ে কেউ যেন আর কোন রকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে না পারে। আমাদের আলেম ওলামাগণ হচ্ছে ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’। মানুষ মসজিদের ইমাম, খাদিম এবং আলেম-ওলামাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখে। আমাদের সমাজে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে- যে বাল্যবিবাহ, মাদকাশক্তি, নারীর প্রতি সহিংসতা, গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল এবং দুর্নীতি ইত্যাদি দূরীকরণে ইমাম ও খতিব সাহেবগণকে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা যখন মসজিদে কোন বয়ান দেন বা জুম্মার নামাজে খোৎবা পড়েন সে সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে মানুষ যাতে বিরত থাকে সে বিষয়গুলো আপনারা মানুষের সামনে তুলে ধরবেন এবং এর বিপরীতে সঠিক মানবিক গুণগুলো যাতে উঠে আসে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।

তাছাড়া, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক এগুলো আমাদের সমাজকে, এক একটা পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যেন প্রত্যেকের ছেলে-মেয়েরা বিরত থাকে, এটা যে ইসলাম ধর্মের প্রতি কোন সম্মান নয় বরং ইসলামের বদনাম হয় সেই বিষয়টার দিকে সকলে যাতে সচেতন হয়। নিজেদের সন্ততির দিকে নিজেরা যেমন তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও তাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি লক্ষ রাখবেন। আপনাদের ছেলে-মেয়ে কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে-জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে যেন কোনভাবে সম্পৃক্ত না হয়। আর এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও আপনারা অবদান রাখতে পারেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগ সব সময় ইসলামের সেবক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও ইজতেমা মাঠের জায়গা দেওয়ার পাশাপাশি ঘোর দৌড় ও জুয়া খেলা এবং মদ খাওয়া বন্ধ করেছিলেন।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশকে ওআইসির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।”

দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টি মসজিদ খোলার মাধ্যমে, প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত ৯৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৬৪টির মধ্যে ১০০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। তিনি এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছিলেন। আশা করা হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হবে।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য দেন।
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহী ও শরীয়তপুর  থেকেও কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ।

অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।- বাসস
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি