আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খাদ্যে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান আন্তর্জাতিক সংকটেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত আছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ওপর এর প্রভাব প্রশমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড অতিমারী ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্যপণ্যসহ সবক্ষেত্রে যোগানব্যবস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকার প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।’

খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপকরণ ও নীতি সহায়তার ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে।’

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাবনায় নির্মীয়মাণ দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে।

ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে নির্মীয়মাণ এবং দরপত্র প্রক্রিয়াধীনসহ মোট ১৪ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পরিকল্পনাগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

একই প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট।

১১ হাজার ৬০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মীয়মাণ রয়েছে। ২০২৩-২০২৬ সালের মধ্যে এগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি সাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মীয়মাণ রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি চালু হবে বলে আশা করা যায়।

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে দেশে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করে চলছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে জ্বালানি বহুমুখীকরণ অর্থাৎ গ্যাস বা এলএনজি, কয়লা, বিদ্যুৎ আমদানি, তরল জ্বালানি, নিউক্লিয়ার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ পরিকল্পনাগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে পাঁচ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে আজ ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াটে (ক্যাপটিভ, অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য ও জীবাশ্ম জ্বালানিসহ) উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, আমদানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনেকগুলো দেশ নিজ নিজ দেশের গণহত্যাকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানায়। পরে আলোচনার মাধ্যমে ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যেহেতু ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে, সেহেতু একই বিষয়ে আরো একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের প্রস্তাবটি সমীচীন হবে না। তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষযক মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও কয়েকজন শহীদ পরিবারের সদস্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গণহত্যা নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তি ও সংগঠনও বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে।’’

সংসদ নেতা বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় পৃথিবীতে সংঘটিত অন্য যেকোনো গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় প্রক্রিয়ার মতোই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে, বন্ধুরাষ্ট্রসহ, গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি আদায় এবং বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সহজ হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

সরকারি দলের মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪১টি কম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। বিভিন্ন জোনে ৫০টি শিল্প নির্মীয়মাণ রয়েছে। এসব শিল্প থেকে এ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য উৎপাদন হয়েছে এবং ২৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই শিল্পগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে ৮৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ১২ হাজার ৪৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং এক লাখ ২৩ হাজার ২৫৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এক হাজার ১৩১টি সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ৪ হাজার ৬৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ৬৪ হাজার ৮৪৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৭৫০টি সেতু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সৈয়দা রুবিনা আক্তারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের ৫৫ লাখ ৬১৭টি পরিবার, অর্থাৎ প্রায় ২৮ লাখ মানুষকে ঘর প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে।’

কেআই//