উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১০:৩০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও স্কলারদের উদ্দেশে বলেছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির দেশ। আগামী ২০৩৭ সালের মধ্যে ২০তম হব। পাশাপাশি ২০২৬ সাল নাগাদ আমরা একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হব।
২০৪১ সালের মধ্যে আমরা সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিউইয়র্ক সিটির বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি : সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য (ভিডিওতে ধারণকৃত) দেন তিনি।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. বীরুপাক্ষ পালের সঞ্চালনায় সেমিনারের প্যানেলিস্টরা হচ্ছেন জাতিসংঘের অর্থনৈতিক বিষয়ক গবেষণা টিমের সদ্য বিদায়ী প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম, কলরাডো ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ফরিদা খান, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মাইকেল এস স্ট্যাকলার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি বিশেষজ্ঞ ড. সুফিয়ান এ খন্দকার এবং নিউজার্সির মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ-কর্ম বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মাতবর।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে এসেছি আমার পিতার স্বপ্ন অনুধাবন করে। স্বপ্নটি ছিল বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
যেখানে প্রত্যেকটি নাগরিক স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমরা এই স্বপ্ন পূরণের পথে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি। ২০২৬ সাল নাগাদ আমরা একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হব। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে গত সাড়ে ১৪ বছরে আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কল্যাণে ব্যাপক সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশ উন্নতি লাভ করেছে।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি। ২০৩৭ সালের মধ্যে আমরা ২০তম হব। দারিদ্র্য বিমোচনে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২২ সালে এই হার নেমে এসেছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। অতি দারিদ্র্যের হার এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় দাড়িয়েছে ২ হাজার ৭ শত ৬০ ডলারে। করোনা মহামারির পূর্বে আমাদের জিডিপি দাড়ায় ৬ দশমিক ৭ শতাংশে। করোনা মহামারিকালে যেখানে অন্যান্য দেশগুলোর উৎপাদন কমে যাচ্ছিল, সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এখন প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাড়িয়েছে ৭ শতাংশে। শিল্পখাতে জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ২২ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ হয়েছে।’
২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমাদের গড় আয়ু ৭৩ বছর। একই সঙ্গে দ্রত কমেছে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার। দক্ষিণ এশিয়ায় লৈঙ্গিক সমতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন শীর্ষস্থানে। বাংলাদেশের জিডিপির আকার এখন ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ ২০০৬ সালে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। বেকারত্ব হার নেমে এসেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশে। স্বাক্ষরহার বেড়েছে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আমরা বিনামূল্যে জমি ও ঘর দিয়েছি। গত মাসে আমরাই দেশের প্রথম সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই পরিবর্তনগুলো কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জনগণ, বিচক্ষণ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম এই পরিবর্তনের পেছনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ এক সময় ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল, তারপর পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তানের দেশভাগের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে তেজোদীপ্ত আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে ২৩ বছরের এক দীর্ঘ সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে বিজয় লাভ করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাতির পিতা যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে ও আমার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। আমাকে ৬ বছরের জন্য শরণার্থী জীবন যাপন করতে হয়েছিল। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা চিন্তা করে ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। আমার এই পথচলা সহজ ছিল না। কমপক্ষে ১৯ বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল এর মধ্যে অন্যতম। এই হামলায় আমার দলের ২২জন নেতা-কর্মী মারা যান এবং পাঁচ শতাধিক আহত হন।’
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মভূমিকে ভুলে যেও না। সর্বপরি জন্মভূমিই আমাদের পরিচয়। তোমাদের মেধা, জ্ঞান ও দক্ষতা দেশের কল্যাণে সদ্ব্যবহার করবে। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন চাইলে তোমরা তা করতে পারবে।’
প্যানেলিস্টদের বক্তব্য উপস্থাপনের আলোকে নিজ নিজ পর্যবেক্ষণ দেন সিনেটর (জর্জিয়া) শেখ রহমান, সিনেটর মো. মাসুদুর রহমান (কানেরকটিকাট) এবং স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ (নিউহ্যামশায়ার) আবুল বি খান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম।
কেআই/এসবি/
আরও পড়ুন