রোববার কোটা আন্দোলনকারীরা সড়কে নামলেই ‘কঠোর ব্যবস্থা’
প্রকাশিত : ২০:৩৪, ১২ জুলাই ২০২৪
‘শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে’ এই বক্তব্যকে এখন ফোকাস করছে সরকার। রাজনৈতিক দিক থেকেও এক ধরনের চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এসব কৌশল কতটা ইতিবাচক ফল দেবে, সেই আলোচনাও রয়েছে সরকার ও দলের ভেতরে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ইতিমধ্যে রাজপথ থেকে শ্রেণিকক্ষে নিতে চাপ প্রয়োগ শুরু করেছে সরকার। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থান প্রকাশ করছে। সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার অফিস খোলার দিনে সড়ক দখল করে আন্দোলনে নামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সরকারের উচ্চপর্যায়ে এক বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক মনে করে সরকারও কোটাব্যবস্থায় সংস্কারের বিষয়ে ভাবছে। সে ব্যাপারে সরকার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশের পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন আর স্বাভাবিকভাবে দেখছে না সরকার।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, শুধু দাবি আদায়ের আন্দোলন হলে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর গত বুধবারই আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল; কিন্তু বৃহস্পতিবারও আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এ থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকেরা। এ জন্য যেকোনো মূল্যে আন্দোলন আর বাড়তে না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
একাধিক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়ে সরকার এত দিন ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এখন সরকার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে এই আন্দোলন মোকাবিলা করার পথে হাঁটতে চাইছে। বৃহস্পতিবার অন্তত চারজন মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি অব্যাহত রেখে সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি দেখাচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, আন্দোলনকারীরা সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, এমন কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রীদের বাইরে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, রাস্তায় কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, আদালতের আদেশের পরও যদি কেউ ব্লকেড কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তবে পুলিশ প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ওপর সর্বোচ্চ আদালত চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের আর জনদুর্ভোগ করার কোনো অবকাশ আছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ মনে করে না।
এরই মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতার মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজপথের আন্দোলন থেকে সরানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সরকার সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগও তৎপর হয়েছে। প্রথমে চাপ দিয়ে রাজপথ থেকে শ্রেণিকক্ষে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কারণ শুরুতেই সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করতে চায় না। তবে রোববারও সড়ক দখল করে আন্দোলনে নামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করবে।
এদিকে, শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধের এক ঘণ্টা পর রাস্তা ছেড়ে দিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অবরোধ তুলে নেওয়ার পর আবার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি বৈঠক করে শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে কোটাবৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবিসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে শুক্রবার বিকালে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগ মোড়ের সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান ও বক্তব্য দেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়। তবে এ সময় অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার গাড়িগুলো চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা পথ তৈরি করে দেন।
পরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বাকের মজুমদার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) সব বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় জেলায় আমাদের অনলাইন-অফলাইন প্রতিনিধি বৈঠক হবে। সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেব। আমাদের এক দফা দাবি সরকারকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে।’
কেআই//
আরও পড়ুন