বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী
প্রকাশিত : ১৫:২৮, ১৫ জুলাই ২০২৪ | আপডেট: ১৬:৫০, ১৫ জুলাই ২০২৪
বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক প্রাণী (মেরিন মেগাফনা) ‘করাত মাছ’ সম্পর্কিত প্রামাণ্যচিত্র ‘খটক: দ্য স্টোরি অফ এন আননোন জায়ান্ট’-এর প্রিমিয়ার এবং ‘রেইজ অব হোপ’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেঙ্গল এলাসমো ল্যাব। রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রাঙ্গনে আগামী ১৮ জুলাই বিকেল ৪টায় এ আয়োজন শুরু হবে।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য এবং অর্জিত জ্ঞান সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বেঙ্গল এলাসমো ল্যাব ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় এই আয়োজন করছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে সকলের মাঝে বিশেষ করে, তরুণদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ও প্রজাতি রক্ষা করা সম্পর্কে জানতে এবং রক্ষা করতে এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হবে।
বেঙ্গল এলাসমো ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলিফা বিনতে হক ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্টাডি ইউকে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-২৪ এর ‘সায়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ক্যাটাগরি’র ফাইনালিস্ট এবং একজন কমনওয়েলথ স্কলার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রকৃতি ও মহাসাগর সংরক্ষণের বিষয়টি আসলে মানুষের ইচ্ছাধীন, এই ধারনাটিই আয়োজনের মূলে রয়েছে। হাঙর, শাপলাপাতা মাছ, ও করাত মাছের মতো মহাবিপন্ন প্রাণীদের নিয়ে সচেতন করতে সব ধরণের মানুষদের একত্রিত করা, অর্থপূর্ণ আলোচনা শুরু করা এবং আগামী প্রজন্মের স্বার্থে তাদের নিরাপদ রাখার উপায় বের করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।”
আগামী ১৮ জুলাই মহাবিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ‘করাত মাছ’ সম্পর্কিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। এর পাশাপাশি, তিনদিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করা হবে; এ প্রদর্শনীতে অসাধারণ সব আলোকচিত্রের মাধ্যমে সমুদ্রের অপার রহস্য তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর শ্যানন ওয়েস্ট বলেন, “সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ও প্রজাতির সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতনতা বাড়াতে বেঙ্গল এলাসমো ল্যাবের এই আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমরা আনন্দিত। সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ এবং দেশের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় আমরা বেঙ্গল এলাসমো ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও আমাদের স্টাডি ইউকে অ্যালামনাই প্রোগ্রাম ২০২৩-২৪ এর ফাইনালিস্ট এবং কমনওয়েলথ স্কলার আলিফা বিনতে হককে সাধুবাদ জানাই। সাসটেইনিবিলিটি নিশ্চিতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তায় এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও আস্থা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিফার এই অর্জন তারই সাক্ষ্য দেয়।”
উদ্বোধনী দিনে ‘বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশে প্রজাতি সংরক্ষণ’ (স্পিসিস কনজার্ভেশন ইন এ গ্লোবাল সাউথ কান্ট্রি), এই বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে এক আলোচনা সভায় নিজেদের মতামত তুলে ধরবেন আমন্ত্রিত আলোচকরা। টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক প্রাণী, মাছ ও জেলে সম্প্রদায়ের গুরুত্ব এবং কার্যকর সংরক্ষণ নিশ্চিতে প্রমাণভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার সাথে কমিউনিটিকে সংযুক্ত করার প্রভাবের মতো বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে এই আলোচনা করা হবে।
আয়োজনে বৈশ্বিকভাবে মহাবিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ‘করাত মাছের’ ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রাণীটি বাংলাদেশের উপকূলে নির্বিচারে মাছ ধরা ও বাসস্থান কমে যাওয়ার প্রভাবে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী নিয়ে কাজ করার অসুবিধা, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জালে উঠা মাছ (বাইক্যাচ – জালে অনিচ্ছাকৃতভাবে ধরা পড়া মাছ বা প্রাণী, যা সাধারণত বিক্রি করা যায় না) ও তার প্রভাব এবং জেলেদের মাঝে সচেতনতার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে মানুষ।
সমুদ্র সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধিতে ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সবাইকে জানাতে তিনদিনব্যাপী ‘রেজ অব হোপ’ প্রদর্শনীটি আগামী ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শেফালী বেগম। প্রদর্শনীতে থাকা অনবদ্য সব আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সৌন্দর্য, গুরুত্ব ও সংরক্ষণ প্রচেষ্টার বিষয়গুলো উঠে আসবে। দর্শনার্থীরা রাজধানীতে বসেই আমাদের বঙ্গোপসাগরের উপকূলের অপরূপ সৌন্দর্য, সেখানকার অধিবাসী, তাদের জীবনযাত্রা ও অবসর সময়ের চিত্রের সাথে সংযুক্ত ও একাত্ম হওয়ার সুযোগ পাবেন।
‘মাছ ও জেলেদের জন্য টেকসই সমুদ্র’ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে উদ্ভাবনী বিজ্ঞান ও সম্প্রদায়ভিত্তিক সংরক্ষণ-ব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে বেঙ্গল এলাসমো ল্যাব। সেভ আওয়ার সিজ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ও ড. রুথ লিনি’র সহযোগিতায় বঙ্গোপসাগরের আকর্ষণীয় সব গল্প সকলের সামনে তুলে ধরা এবং ভবিষ্যতের সুন্দর, সুনীল ও সুনিশ্চিত সমুদ্র নিশ্চিত করতে মানুষের জানাশোনা বৃদ্ধি করা, তা ছড়িয়ে দেয়া ও সে অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে পরিবর্তন নিয়ে আসাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।
কেআই//
আরও পড়ুন