ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মৃত্যুফাঁদ পেরিয়ে ইতালি যাওয়া বাংলাদেশির গল্প

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫০, ৬ জুলাই ২০১৭

ছবি : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে এভাবেই বহু বাংলাদেশি ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করছে

ছবি : জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে এভাবেই বহু বাংলাদেশি ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করছে

৫ মে রাত ১টা। লিবিয়ার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে একটি ছোট্ট ট্রলারে উঠেন প্রায় ৯০০ যাত্রী। তিল ধারণের জায়গা ছিল না ট্রলারটিতে। গায়ে গায়ে লেগে বসা যাত্রীদের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো জো। এই যাত্রীদের ভিড়ে ছিলেন বাংলাদেশের বাকের হোসাইন।
ট্রলারের সব যাত্রীর মতো বাকেরের লক্ষ্য ছিল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে ঢোকা। অবৈধ পথে ইউরোপে ঢোকা যে এত কষ্ট তা কল্পনাও করতে পারেননি বাকের। দু’চোখে ছিল শুধুই স্বপ্ন। তাই আর্থিক সচ্ছলতার আশায় স্বপ্নে বিভোর হয়ে ইউরোপে পৌঁছতে যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি ছিলেন বাকের। খবর বিবিসির।
অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ছুটে চলা বাকেরের সামনে নিয়তির দুটো দরজা খোলা ছিল। এর একটি সাগরে ডুবে মরা, অন্যটি ইতালিতে পৌঁছানো। বাকের বলেন, ‘জীবনে কিছু করতে পারছিলাম না। অনেক কষ্ট ছিল বুকে। চিন্তা করলাম একটা ঝুঁকি নিয়ে দেখি। বাঁচলে তো বাঁচলাম, আর মারা গেলে তো কিছু করার নাই।’ শুধু বাকের হোসাইন-ই নন, তার মতো আরও প্রায় আড়াইশ’ বাংলাদেশি ছিলেন ওই ট্রুলারে। ট্রুলারটি লিবিয়া উপকূল ছেড়ে আসার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই উত্তাল সমুদ্রের দানবীয় রূপ দেখে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন যাত্রীরা। ভয়ংকর সে যাত্রার কথা আমৃত্যু মনে থাকবে বাকেরসহ অন্যদের।
সেই দুঃস্মৃতি হাতড়ে বাকের বলেন, ‘অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কেউ কেউ বমিও করছিলেন। সাগরের ঢেউয়ের ভয়ংকর রূপ দেখে অনেকে ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা সহায় হওয়ায় ওই যাত্রায় বেঁচে গেছি। যেন নতুন জন্ম নিয়ে আসছি এখানে।’
লিবিয়া উপকূল থেকে ট্রুলারে যাত্রা শুরুর পাঁচ ঘণ্টা পরে সেটি ইতালির সমুদ্রসীমায় ঢোকে। কিন্তু সেখানে ইতালির উপকূলরক্ষীদের জাহাজের সামনে পড়ে নৌকাটি। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ইতালির উপকূলরক্ষীরা সে ট্রুলারের যাত্রীদের বড় জাহাজে তুলে আনা শুরু করে। প্রায় ৫০০ যাত্রীকে বড় জাহাজে তোলার পর সে কাজ বন্ধ করে দেয় ইতালির উপকূলরক্ষীরা।
১০ ঘণ্টা সমুদ্রে ভাসমান থাকার পর ইতালির সময় রাত ৩টার দিকে একটি বড় জাহাজে তোলা হয় বাকি যাত্রীদের। সেখান থেকে বর্তমানে ইতালির একটি আশ্রয় শিবিরে আছেন বাকের।
নোয়াখালীর বাসিন্দা বাকের বাংলাদেশ থেকে প্রথমে শ্রীলংকা এবং পরে কাতার পৌঁছান। কাতার থেকে তুরস্ক হয়ে তিনি লিবিয়ায় পৌঁছেন। পুরো যাত্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করে তিনি শেষ পর্যন্ত ইতালিতে পৌঁছেছেন।
লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছনোর এ পথ কিভাবে চিনলেন বাকের হোসাইন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খবরে দেখেছি যে, লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়া যায়। তখন আমাদের এলাকার এক দালালের সঙ্গে চুক্তি করলাম।
বাকেরের মতো শত শত বাংলাদেশি গত কয়েক বছরে এভাবেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি গিয়েছেন। আবার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অনেকেরই সলিল সমাধি হয়েছে।

//এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি