রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
প্রকাশিত : ১৬:০৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৪০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাদের নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীরা যাতে নিজেদের আবাসভূমিতে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রোববার কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সংগঠন ওআইসির প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। নাগরিকত্বের অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। এই জনগোষ্ঠী অস্তিত্বের সঙ্কট, নিষ্ঠুরতা এবং উৎখাতের শিকার।
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওআইসির সামিট চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন, ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওসাইমিন বক্তব্য দেন।
হাজারে হাজারে রোহিঙ্গা সীমান্ত পার করে ঢুকে পড়ায় বাংলাদেশ এ সমস্যায় সরাসরি আক্রান্ত। বাংলাদেশ একমাত্র মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিচ্ছে।
আবদুল হামিদ বলেন, মিয়ানমারের এই সমস্যাকে এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা নিজের ভূমি রাখাইনে নিরাপত্তা এবং মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যেতে থাকতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে আমি ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই।
কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে চলমান জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।
এর মধ্যে গত ২৪ অগাস্ট রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে।
এ দফায় ইতোমধ্যে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ধারণা।
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতেও তারা রাজি নয়।
আস্তানার ‘প্যালেস অব ইনডিপেনডেনসে’ চলমান ওআইসি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, বিভিন্ন দেশ তাদের উন্নত প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগিতা পৃথিবীতে অন্য এক বিভেদ তৈরি করছে।
পশ্চিমা প্রযুক্তি এবং রেনেসাঁর সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের তাল মেলাতে না পারার প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন, এক সময় মুসলমানরা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় যে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দিত তা ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। নতুন জ্ঞানের অন্বেষণে বিনিয়োগ করতে হবে, সমন্বিত গবেষণা ও উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করতে হবে।
মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদদের একই নেটওয়ার্কের আওতায় কমপক্ষে ১০ বছর মেয়াদী কর্মসূচি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা বিশ্বের মধ্যে মুসলমানদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে আরও গতিশীলতা তৈরি করবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নীতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, এই নীতির ফলে বাংলাদেশ বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। ওষুধ শিল্প ও বিকল্প ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে আধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বাংলাদেশ ব্যবহার করছে। জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল শস্য উদ্ভাবন করেছে, পাটের জেনম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছে।
এ সময় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার কথাও রাষ্ট্রপতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনেকেরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই ধরনের সামর্থ্য রয়েছে। আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। সুনির্দিষ্ট প্রকল্পে দ্বিপক্ষীয়-যৌথ এবং অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে আমাদের কাজ করা দরকার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দারিদ্র বিমোচন এবং উন্নয়নের ‘গেইম চেঞ্জার’ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
এ সময় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতে মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নে কিছু ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন’ প্রস্তাব করেন আবদুল হামিদ।
ওআইসির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক এই সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি হামিদ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
//এআর
আরও পড়ুন