ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

প্রাথমিক স্তরে পরীক্ষার কোনো আবশ্যকতা নেই: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫১, ২২ নভেম্বর ২০১৭

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম যুক্ত করার পাশাপাশি এই স্তরে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বুধবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির ‘সহজপাঠ: শিশুর সামগ্রিক বিকাশ’ শীর্ষক এক আলোচনা চক্রে যোগ দিয়ে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ তুলে ধরার পাশাপাশি প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির সমালোচনা করেন তিনি।

প্রাথমিক স্তরে পরীক্ষা পদ্ধতির বিরোধিতা করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ভালো শিক্ষা পাওয়া নয়, তাদের লক্ষ্য কেবল প্রথম হওয়া। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা এখন পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। প্রাথমিক স্তরে পরীক্ষার কোনো আবশ্যকতা নেই।”

শিশুদের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে ‘আনন্দযোগ নেই’ অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শোচনীয়। এখানে শিশুদের পরীক্ষার নামে রীতিমতো পীড়ন করা হচ্ছে। এতে বিন্দুমাত্র আনন্দযোগ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা এখন পরীক্ষাসর্বস্ব, জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আমরা নষ্ট করে ফেলেছি।”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও শিক্ষাবিদরা যখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় নৃত্যকলা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন, তখন মৌলবাদীদের একটি দল এর বিরোধিতা করে।

তিনি বলেন, “শিক্ষা কমিশন যখন ছড়া, চারুকলা, নৃত্য শিক্ষা ব্যবস্থায় যোগ করার কথা বলছে, তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ভাবনাচিন্তাই নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সেই অযৌক্তিক কথায় কর্ণপাত করল।”

স্বাধীনতার পর গঠিত কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে তারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় ‘নৈতিক শিক্ষা’কে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার কর্মকর্তারা তাদের সেই পরামর্শ উপেক্ষা করে মাদ্রাসায় ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রণয়ন করেন।

নব্বইয়ের দশকে অধ্যাপক শামসুল হক নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশনেও সদস্য হিসেবে কাজ করা এই এমিরেটাস অধ্যাপক বলেন, “আমরা যতবার পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ ও বদল করতে চেয়েছি, ততবারই আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, পাবলিক পরীক্ষার নম্বরের একটি অংশ স্কুল থেকে আসবে। কিন্তু তা করতে পারিনি।”

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনামলে তার এক পরিচিতের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতিতে নতুন ধারা প্রবর্তন করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

“সে সময়ে নিয়ম হল, কেউ যদি পাবলিক পরীক্ষায় কোনো একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হন, তবে পরবর্তী বছরে সেই বিষয়েই পরীক্ষা দিলেই চলবে। অন্য কোনো বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে না তাকে। মজার ব্যাপার হল, এরশাদ সাহেবের কোনো এক পরীক্ষার্থী আত্মীয়ের জন্য এই পদ্ধতি গৃহীত হয়েছিল।”

কবি, সাংবাদিক আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজির অধ্যাপক শাহীন ইসলাম, শিশু অধিকারকর্মী নুরুন্নাহার নূপুর, লেখক আনিসুল হকসহ ‘সহজপাঠ’ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্বেচ্ছাসেবকরা।
অধ্যাপক মনজুর আহমেদ শিশুদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “শিশুকে তার চিন্তার স্বাধীনতা দিতে হবে। ওর উপর কোনো কিছু চাপিয়ে না দিয়ে সে কি বলতে চায়, তা শুনতে হবে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিয়ে শিশুরা নিজেরা কি ভাবছে, তা আমাদের শুনতে হবে।”

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি