ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

শুরু হলো রক্ত দিয়ে কথা বলার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারি

প্রকাশিত : ০৮:৪৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | আপডেট: ১৩:৩৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

Ekushey Television Ltd.

শুরু হলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের অনন্য এক মাস। যার চূড়ান্ত রুপ পেয়েছিলো বায়ান্ন’র ২১শে ফেব্র“য়ারি। রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরের প্রাণের বিনিময়ে বাঙালী পেয়েছিলো বাংলায় কথা বলার অধিকার। সময়ের সাথে সাথে বাঙালীর এই আত্মত্যাগ স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব অঙ্গনে। একুশে ফেব্রুয়ারি হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম নেয় দু’টি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকার পরও পূর্ব বাংলা হয় পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু, শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের শিকার হতে থাকে পূর্ব বাংলার মানুষ। মোটা দাগে প্রথম আঘাত আসে ভাষার উপর। ৫৬ শতাংশ বাঙালী বাংলায় কথা বললেও মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন তৎকালীন গভর্নর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তার এই ঘোষণায় ফুঁসে উঠে বাঙালী। দানা বাঁধতে থাকে আন্দোলন। ১৯৪৭ সালেই গঠিত হয় তমুদ্দিন মজলিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সভা করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে জনমত গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বাঙালী সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। তার এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সহ অবাঙালী সদস্যরা। এর কিছুদিন পরই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আবারো গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব পাঠায়। তাদের এসব ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ভাষা সংগ্রাম কমিটি। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন পল্টন ময়দানে জনসমাবেশে আবারো ঘোষণা দেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই ঘোষণা আন্দোলনের বারুদে অগ্নিসংযোগ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পূর্ব বাংলা। ৪ঠা ফেব্র“য়ারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হয় স্বত:স্ফূর্ত ধর্মঘট। শুধু ছাত্ররাই নয়, ভাষার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ আপামর জনগন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করলে আগের দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। ২১ শে ফেব্র“য়ারি সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছাত্র- জনতা রাস্তায় নেমে এলে গুলি চালায় পুলিশ। রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। ভাষার দাবিতে প্রাণদানের হয় নতুন ইতিহাস। মাতৃভাষার দাবিতে আত্মোৎসর্গের ঘটনা ক্রমেই নজর কাড়ে বিশ্ববাসীর। ১৯৯৯ সালে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ফেব্রুয়ারি এলেই আবেগাপ্লুত হয় বাঙালী। ভাষা শহীদদের রক্তে যেন আরো লাল হয়ে ফোটে পলাশ- শিমুল। তারপরও, রক্তে লেখা বর্ণমালা সাহস যোগায় বাঙালীকে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি