হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল
প্রকাশিত : ১৩:২১, ৮ জুন ২০১৯
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। সাদা-কালো রঙের এ পাখিটি গ্রাম বাংলার সর্বত্র দেখা যেত। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি কৃষক বান্ধবও এই দোয়েল। এই সুরেলা পাখিটির বিচরণ সর্বক্ষেত্রে কমে যাচ্ছে।
দোয়েলের গলা খুবই সুরেলা ও মোলায়েম। বিশ্বের অন্যতম সেরা গায়ক পাখি হিসেবে এদের পরিচিতি রয়েছে। পুরুষ পাখি গান গেয়ে কাটায় আর স্ত্রী পাখি কর্কশ স্বরে ডাকে। পুরুষ দোয়েল আকারে কিছুটা বড় এবং অনন্য সুন্দর। গলা, মাথা চকচকে কালো, বুক সাদা। স্ত্রী পাখির রং গাঢ় বাদামি-ধূসর। এরা পরিচ্ছন্ন এবং নিয়মিত গোসল করে।
সাধারণত দালান কোটার ফাঁকফোকড়, গাছের কোটরে এবং ভাঙ্গা হাঁড়ি-কলসের ভেতরে দুর্বাঘাস, গবাধি পশুর লোম, খড়কুটো দিয়ে বাসা বাঁধে। ৩/৪ দিনের মধ্যে ৪টি ডিম দেয়। ১৪/১৫ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। স্ত্রী পাখি একা ডিমে তাঁ দেয় এবং বাচ্চা লালন-পালন করে। পুরুষ পাখি পাহারা দেয়। প্রয়োজন না হলে এরা এক নাগাড়ে বেশি দূর উড়ে না। মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদ্য খোঁজে।
তবে ইদানিংকালে এর আনাগোনা কমে গেছে। এর কারণও রয়েছে, পাখির জন্য যে পরিবেশ দরকার এটি হারিয়ে গেছে। সব ক্ষেত্রে যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় পাখির বিচরণ ক্ষেত্র বাঁধাগ্রস্ত। মাঠে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, বাড়ির আঙ্গিনায় এই পরিচিত পাখিটি কম দেখা যায়।
এক সময় গাছের ডালে ডালে দোয়েল পাখির ছুটাছুটি ও সুমধুর ডাকে আকৃষ্ট হতো মানুষ। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতিতে দোয়েল একটি অবস্থান করে নিয়েছিল। বাড়ির আশপাশ আর মাঠে-ঘাটে তাকালেই দোয়েল চোখে পড়ত। সেই দৃশ্য আর নেই। দোয়েলের সুমধুর গানে গ্রাম বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙ্গলেও এখন আর গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে আগের মত দোয়েলের ডাক শোনা যায় না।
দোয়েল যেমন বাংলাদেশের জাতীয় পাখির তালিকায় তেমনি কৃষকদের সাহায্যকারী বন্ধু হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে। প্রধান অর্থকরী ফসল ধান ধ্বংসকারী পোকা-মাকড়কে খেয়ে সাবাড় করতো তেমনি অন্যান্য ফসলের ক্ষতিকর পোকা-মাকড় খেয়ে কৃষকদের উপকার করে থাকতো দোয়েল পাখি। এখন সেখানে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, পরিবেশ দূষণ, ক্ষেত খামারে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
কৃষকের ফসল বিনষ্টকারী পোকামাকড় দোয়েলের প্রধান খাদ্য হওয়ায় পোকামাকড় দমন করতে এক সময় কৃষকদের আলাদা কোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হতো না। মূলত এ কারণেই দোয়েল গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে কৃষক বন্ধু পাখি হিসেবে বেশ পরিচিত।
দোয়েল ঘন বন জঙ্গলে কিংবা খোলা জায়গায় সব সময় থাকতে ভালবাসে না। তাই বসত বাড়ীর আশেপাশে, গাছের কোটর, ঘরের চালের ফাঁকা জায়গা ও সবজির মাচায় বাসা বাঁধতো।
এএইচ/
আরও পড়ুন