আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস
প্রকাশিত : ১৩:১৯, ২০ জুন ২০১৯
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্ব যখন প্রযুক্তি ও অধুনিকতার র্শীষে উঠছে ঠিক তখনই তরতরিয়ে বইছে ঘরহারা মানুষের স্রোত। সেই সাথে মাত্রা ছাড়িয়ে বাড়ছে শরণার্থীর সংখ্যা। বিশ্বায়নের এই যুগে সরাসরি যুদ্ধের ঢামা ঢোল বাড়ুক বা না বাড়ুক জাতি বা বর্ণের রেষারেষিই শরণার্থী ও বাস্তুহারা মানুষ বাড়ার একমাত্র কারণ।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশের জন্যও এই দিবসটি বেশ গুরুত্ব বহন করে। আজ বৃহস্পতিবার নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের জন্য এ দিনটি কোনো বিশেষত্ব বয়ে আনবে কিনা তা নিয়ে বিচলতি নন খোদ শরণার্থীরা।
গতকাল বুধবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয় সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে বলেছে, সারা বিশ্বে ৭ কোটিরও বেশি মানুষ ঘরহারা। যুদ্ধ, নিপীড়ন এবং সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে এ সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যাটি তুলে ধরে সংস্থাটি বলছে, গত প্রায় ৭০ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এই বাস্তুহারা মানুষদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু।
উন্নত বিশ্বের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে মানুষ নিজের সীমানা ছেড়তে বাধ্য হচ্ছে বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা। শান্তির কথা বলেও শান্তির কথা চিন্তা করছেন না বিশ্ব নেতারা বলেও মনে করেন তারা। বুধবার প্রকাশিত ইউএনএইচসিআর তাদের বার্ষিক ঐ প্রতিবেদনে বলেছে, এই বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীর বোঝা কোন উন্নত পশ্চিমা দেশ বহন করছে না বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর বোঝা বহন করছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেনি, এ কারণে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা শরণার্থীর মর্যাদা পাচ্ছেন না। ১৯৭৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করলেও পরে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তারা নিজ দেশে ফেরত যান।
এরপর ১৯৯১ এর পর থেকে বড় আকারে তিন দফায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। ২০১৭ সালের আগষ্টের পরে খুবই স্বল্প সময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থী। এই দফায় রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢলকে ইউএনএইচসিআর গত এক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থীদের ঢল হিসেবে চিহিৃত করেছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বৈশ্বিক প্রবণতা ভুল দিকেই যাচ্ছে। নতুন করে যুদ্ধ আর সংঘাত বাড়ছে এবং তৈরি করছে নতুন নতুন শরণার্থী এমনটি বলছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি জেনেভায় ‘গ্লোবাল ট্রেন্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশকালে। নতুন শরণার্থীরা আগের শরণার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, অথচ পূর্ববর্তীদের সমস্যার কোনো কিনারা হয়নি।’
ইউএনএইচসিআর’র প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা সাত কোটি ৮০ লাখে পৌঁছেছে। যা ২০১৭ সালের চেয়ে সংখ্যায় দুই কোটি ৩০ লাখ বেশি। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার মানুষ বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এ সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার তুলনায় বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
১৯৫১ সাল থেকে রিফিউজি কনভেশনে রাখা তথ্যানুযায়ী, এর আগে ১৯৯২ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তুলনায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। সেবার গড়ে প্রতি ১০০০ জনে ৩ দশমিক ৭ জন বাস্তুচ্যুত হত। কিন্তু ২০১৮ সালে ওই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি (৯ দশমিক ৩) হয়ে গেছে।
বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ছাড়ালেও প্রকৃত সংখ্যাটা আরও বেশি হবে বলেই জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এ সংস্থা। গৃহহীনদের তিনটি প্রধান দলে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দলে যুদ্ধ, সংঘাত বা নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালানো মানুষদের রাখা হয়েছে।
বিশ্ব জুড়ে এ ধরনের শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ৫৯ লাখ যা গেল বছরের হিসেব এবং ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ৫ লাখ বেশি। এর মধ্যে ফিলিস্তিনি শরণার্থী ৫৫ লাখ। দ্বিতীয় দলে আছেন আশ্রয়প্রার্থীরা। যারা নিজেদের জন্মভূমি ছেড়ে নানা দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। তাদের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। তৃতীয় দলে আছেন ওই সব গৃহহীন মানুষ যারা বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজ নিজ দেশের ভেতরই আশ্রয় নিয়ে আছেন। বিশ্বজুড়ে এ সংখ্যা প্রায় চার কোটি ১৩ লাখ।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া তিন ভাগের মধ্যে দুই ভাগই হলো মিয়ানমার, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান, সিরিয়া থেকে বিতারিত হওয়া মানুষ। এই সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছেন সিরিয়ার নাগরিক যার সংখ্যা ৬৭ লাখ এবং আফগানিস্তানের ২৭ লাখ।
জাতিসংঘের মহাসচিবের বাণী
বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতরেসে বাণী দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বাণীর কথা জানানো হয়।
বাণীতে বিশ্ব শরণার্থী দিবস নিয়ে এন্তানিও তার কিছু ভাবনা তুলে ধরেন, ৭ কোটির অধিক নারী, শিশু এবং পুরুষ শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ বাস্তচ্যুত ব্যক্তিবর্গ। এরা সবাই যুদ্ধ, সংর্ঘষ এবং নিপীড়নের কারণে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। যারা জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত হয়ে কয়েকটি দেশ থেকে এসেছেন।
তিনি সে সব দেশগুলোর মানবিকতাকে স্বীকৃতি দিতে চান যারা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আশ্রয় প্রদানকারী দেশগুলো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
আশ্রয় প্রদানকবারী দেশসমূহকে তাদের আতিথয়তাকে উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের সাশে মিলাবো বলেও জানান তিনি। শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শান্তি। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আয়োজিত বিশ্ব শরণার্থী দিবস প্রচারণায় যোগদান করেছে এবং শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে বড় ও ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
এমএস//
আরও পড়ুন