নতুন মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস
প্রকাশিত : ২৩:৪৭, ৯ জুলাই ২০১৯
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের দেওয়া তথ্যমতে সারাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যদিও বেসরকারি হিসেবে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। স্বাধীনতাত্তোর সময় থেকে সীমান্তবর্তী দেশগুলো থেকে ব্যাপকহারে বিভিন্ন উপায়ে এদেশে মাদকের প্রবেশ ঘটেছে।
প্রতিবছর মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সনীতি গ্রহণ করেছে। প্রতিদিন মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। তারপরও থামছে না মাদকের ব্যাপকতা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী ২০০৮ সালে যে পরিমাণ মাদকাসক্ত ছিল, ২০১৬-তে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণে।এতোদিন আমরা মাদক বলতে ইয়াবা, ফেনসিডিলও গাঁজাকে বুঝলেও, নতুন আরেকটি মাদক আমাদের সামনে এসেছে। যার নাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, ইয়াবায় এমফিটামিন থাকে পাঁচ ভাগ আর ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। পার্থক্য এই জায়গায়।
ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের তুলনায় এটি মানবদেহের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। ১০০/২০০ গুণ বেশি উত্তেজনা তৈরি করে। মাদকাসক্তি বিষয়ক গবেষক ও ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, ইয়াবা বা হেরোইন হল ওপিয়ামের বাইপ্রডাক্ট।
"এগুলো থেকেই প্রসেস করে এখন নতুন নতুন মাদক তৈরি হচ্ছে। আইসও এমন একটি নতুন মাদক।" তিনি বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের বাইরে থেকেও কিছু লোক এর বিস্তারে কাজ করছে।
গত ২৭ জুন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথ বা মেথামফেটামাইনসহ নাইজেরীয় একজন নাগরিককে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তার কাছ থেকেই এ ধরণের ৫২২ গ্রাম মাদক পাওয়া যায়।
যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, গত "২৬শে ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর থেকে তিনজনকে মাদকসহ আটকের পর আমরা তার কাছে ৮ গ্রাম আইস পাই।
এরপর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান ও আটককৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকায় একটি ল্যাবের সন্ধান পাওয়া যায়।"
পরে জিজ্ঞাসাবাদে জড়িতরা বিষয়টি স্বীকার করে। বর্তমানে এর মূলহোতা কারাগারে আছে। সেসময় যদি তাদের গ্রেফতার করা না যেত, তাহলে এর ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়তো বলে জানান তিনি।
নতুন এ মাদকটি ইয়াবার মতোই বহনযোগ্য। এটির দামও অনেক। প্রতি গ্রাম প্রায় ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতো বলে আটককৃতরা।
গবেষকরা বলছেন, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সেবন করলে কারও স্ট্রোক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। মানসিক অবসাদ বা বিষণ্ণতার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। আরও অন্যান্য ঝুঁকি তো আছেই। তবে আইস সেবন করে পরে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন ব্যক্তির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
ফলে শুধুমাত্র আইস সেবনে বাংলাদেশে কারও শরীরে ঠিক কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তা এখনো পরিষ্কার না বলে জানান তিনি। (সূত্র: বিবিসি)
আই/কেআই
আরও পড়ুন