ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আইসিডিডিআর’বির গবেষণা

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াবাহী মশা কীটনাশক প্রতিরোধী

প্রকাশিত : ০০:০০, ১০ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৫৭, ১৫ জুলাই ২০১৯

দেশে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে সব ধরনের মশা। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরছে না। এমন তথ্য উঠে এসেছে আইসিডিডিআর’বির এক গবেষণায়।

সেখানে দেখা গেছে, প্রচলিত ওষুধে মশাগুলো শতভাগ কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। শিগগির যদি এসব কীটনাশক পরিবর্তন করা না হয় তাহলে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বাড়বে- এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক যৌথ বৈঠকে এ গবেষণা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) অর্থায়নে রাজধানী ঢাকা শহরে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

সেপ্টেম্বর ২০১৭ ও ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জীবাণুবাহী এডিস ও কিউলিক্স মশা এরই মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কীটনাশক ব্যবহারের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মশা মৃত্যুর হার যদি ৯০ শতাংশের নিচে হয় তাহলে এটা নিশ্চিত যে, মশা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। অথচ আইসিডিডিআর’বির গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস ও কিউলিক্স মশার মৃত্যুহার শূন্যের কোঠায়। এমনকি কীটনাশকের মাত্রা দ্বিগুণ হারে প্রয়োগ করলেও মশার মৃত্যু ঘটেনি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির গবেষক ড. মোহাম্মদ শাফিউল আলম।

তিনি বলেন, এই গবেষণা পরিচালনার জন্য রাজধানীর ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান, কুড়িল, মিরপুর-১, উত্তরা সেক্টর-৪, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, খিলগাঁও, আজিমপুর, নাখালপাড়া থেকে মশার ডিম সংগ্রহ করা হয়।

তারপর সেগুলোকে ল্যাবে রেখে লার্ভা, শুককীট, পিউপা ও প্রাপ্তবয়স্ক মশায় পরিণত হওয়ার পর তার ওপর প্রচলিত কীটনাশকসহ (পারমেথ্রিন ও টেট্রামেথ্রিন) বেশ কয়েকটি প্রয়োগ করা হয়।

সেখানে দেখা যায়, এলাকাভেদে মশার মৃত্যুর হার কোথাও শূন্য ভাগ, কোথাও শূন্য দশমিক ৯ ভাগ, কোথাও ১ দশমিক ৭, কোথাও ১ দশমিক ৯ ভাগ। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ব্যবহৃত কীটনাশকগুলো লার্ভা হত্যা করতে পারলেও প্রাপ্তবয়স্ক মশার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।

গবেষণার সারাংশে বলা হয়, চারটি কীটনাশকের ক্ষেত্রে এডিসের প্রতিরোধী হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিছু কিছু এলাকায় ডেল্টামেথ্রিন ও মেলাথিউন আংশিক প্রতিরোধী হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

তবে কীটনাশক ‘বিন্ডিওক্রাব’ ব্যবহারে মশার মৃত্যু শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ মশা এখনও বিন্ডিওক্রাব প্রতিরোধী হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে কিউলিক্স মশার ক্ষেত্রে ‘প্রপোক্সার’র কার্যকারিতা শতভাগ প্রমাণিত হয়েছে।

মেয়র আতিকুল ইসলাম ওষুধ পরিবর্তনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী ১৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসি’র পরিচালকসহ সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের কীটনাশক পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। নতুন একটি কীটনাশকের অনুমোদন করতে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব পরীক্ষা করে তবেই অনুমোদন দেয়া হয়। তারপরও যত দ্রুত এটা করা সম্ভব আমরা করব।

এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি মশার ওষুধের কম্পোজিশন (রাসায়নিক মিশ্রণ) যেটা থাকে, ১১ বছর ধরে একই ধরনের কম্পোজিশন চলছে।

আমরা আইসিডিডিআর’বি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে ইমিডিয়েটলি মশার ওষুধের কম্পোজিশনে পরিবর্তন আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

আতিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিয়ে নতুন ওষুধ ও নতুন কম্পোজিশন এনে আমরা চেষ্টা করব।

যে তিনটি কম্পোজিশন নিয়ে ওষুধটি হয় এর একটি পরিবর্তন করা হয়েছে, আমি বলেছি না- তিনটি কম্পোজিশনই পরিবর্তন করতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যারা আছেন আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের বিশ্বাস আমরা একটি ভালো ফল পাব।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু। একই সঙ্গে দেশ দুটির সীমান্তে এ রোগের বিস্তার থাকায় বাংলাদেশেও ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে ম্যালেরিয়া জীবাণু। এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সংশ্লিষ্টরা।

আই/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি