ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ এখনো উন্মোচন হয়নি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:১০, ১০ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ০০:১২, ১১ আগস্ট ২০১৯

জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হলেও এর নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ এখনো উন্মোচিত হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী  আ.ক.ম মোজাম্মেল হক।

একুশে টেলিভিশনের নিজস্ব প্রযোজনায় নির্মিত জাতীয় শোক দিবসের বিশেষ কাহিনীচিত্র ‘মৃতের আত্মহত্যা’র উদ্ধোধনী প্রদর্শনীতে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ, বাঙালি ও বঙ্গবন্ধু- এই তিনটি শব্দই এক ও অভিন্ন। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু যারা পেছন থেকে এ কাজটি করিয়েছে অর্থাৎ যারা প্রকৃত খুনি তাদের জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। যে কাজটি আমরা এখনও করতে পারিনি।’

তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারা যে পাপ করেছে তার কারণে অনুসূচনাই শেষ কথা নয়। আমাদের দাবি,জাতির দাবি  এর পেছনে যারা ছিলো তাদের মুখোশ জাতি তথা বিশ্বের কাছে উন্মোচিত করা হোউক। তিনি এ হত্যা কান্ডের জন্য পাকিস্তানি দূতাবাসেরও সমালোচনা করেন।
 
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই গল্পটি অনেক আগে পড়েছি। এই কাহিনীচিত্রের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর প্রতি এদেশের মানুষের আবেগকে লালন করতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে পথভ্রষ্ট একদল সেনা সদস্য। হত্যাকারীদের অনুশূচনা না থাকলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা পিতা হারা এতিম দেশের জন্য প্রতিদিন স্মৃতিকাতর হয়। ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া একটি দেশের কথা ভাবতে গিয়ে খুনীদের ঘৃণা করতে শেখে। এমনি  বিদেশে পালিয়ে থাকা জাতির পিতার হত্যাকারীর পরিবারের আত্ম অনুশোচনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে কাহিনীচিত্র মৃতের আত্মহত্যা। আবুল ফজলের লেখা গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন মাসুম রেজা। ইতিহাসের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির চরিত্র, জীবনযাপন ও সংসারে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর হাতছানি নিয়ে নির্মিত কাহিনীচিত্রটি ১৫ আগস্ট  প্রচারিত হবে একুশে টেলিভিশনে। 

 

আজ শনিবার (১০ আগস্ট) ইটিভি কার্যালয়ে নাটকটির উদ্ধোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, লে.কর্নেল সাজ্জাদ আলী (অব:)-বীরপ্রতীক ও কাহিনীচিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলিরা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একুশে টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল এ. কে মোহাম্মদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)।

স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একুশের নামটির সঙ্গেই সমগ্র বাঙালি জাতির নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। একুশ বাঙালির কথা, বাংলাদেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর কথা বলে। একুশে টেলিভিশনের একটি ঐতিহ্য ছিল, কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

মোহাম্মদ আলী শিকদার আরও বলেন, ‘শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে হত্যা করা হয়েছে। সামনে ১৫ আগস্ট, দিবসটিকে পালন করতে তাই একুশে টিভি বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এরই অংশ হিসেবে কাহিনীচিত্র ‘মৃতের আত্মহত্যা’।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ‘মৃতের আত্মহত্যা’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে একটি ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলাম।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘এই কাহিনীটা আমি অনেক আগে পড়েছি। ইটিভিকে ধন্যবাদ এমন একটা বিষয় নিয়ে কাহিনীচিত্র নির্মাণ করার জন্য।’

লে.কর্নেল সাজ্জাদ আলী (অব:)-বীরপ্রতীক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একজন সাহসী নেতা ছিলেন। তিনি যে কতটা সাহসী মানুষ ছিলেন তা অনেকেই জানেন না। নেতা যদি সাহসী হয় তবে অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। এখন তার মত সাহসী নেতার খুব প্রয়োজন।’

নির্মাতা গোলাম সোহরাব দোদুল বলেন, ‘বাঙালি হিসেবে আমাদের সবার দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করা। আর মুক্তিযুদ্ধ মানেই বঙ্গবন্ধু। সব সময় তাকে ধারণ করেছি। এই কাহিনীচিত্রটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে একটু হলেও ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছি।’

অভিনেত্রী তারিন জাহান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি। পত্রিকা, টিভি, বই থেকে তার সম্পর্কে জেনেছি। যতই জেনেছি মনে হয়েছে কেন আমি সেই সময় জন্মগ্রহণ করলাম না, কেন একবারের জন্য বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ হলো না। বঙ্গবন্ধু আমাদের যা দিয়ে গেছেন তার ঋণ কখনও আমরা শোধ করতে পারব না। কাহিনীচিত্রটির প্রস্তাব যখন পেলাম মনে হলো এর মধ্য দিয়ে হলেও তার প্রতি কিছুটা হলেও শ্রদ্ধা প্রকাশের সুযোগ হবে।’

তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে যুক্ত সবাই অনেক কষ্ট করে এটি নির্মাণ করেছেন। আমরা সম্পূর্ণ আবেগ দিয়ে কাজটি করেছি।’

অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কিন্তু কষ্ট লাগে যখন দেখি আমার সন্তান ভুল ইতিহাস জানছে। আমাদেরকে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। আমি চাই- পাকিস্তানেরও বিচার হওয়া উচিৎ। তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে। এটা এখন সময়ের দাবি।’

অভিনেত্রী সুষমা সরকার বলেন, ‘স্ক্রিপটা যখন হাতে পেলাম কেমন যেন একটা অনুভূতি কাজ করেছে। মৃত মানুষ আবার কি করে আত্মহত্যা করে? আমার মেয়েও আমাকে প্রশ্ন করে এটি নিয়ে। সত্যিই তাই, বেঁচে থেকেও একজন মানুষের যখন হৃদয়টা ভেঙে যায়, বোধ হারিয়ে ফেলে সে মৃতই হয়ে যায়। এ কাহিনীচিত্রটির মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের অংশ হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছি।’

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার সদস্যদের হত্যা পরবর্তী সময়ে সামরিক জান্তার নিপীড়ন ও হত্যা নিয়ে সাহিত্যে প্রথম প্রতিবাদ আবুল ফজলের ছোটগল্প ‘মৃতের আত্মহত্যা’। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বছরখানেক পর এটি লেখা হয়। দেশে তখন মিলিটারি জান্তার ভয়াবহ নিপীড়নমূলক অপশাসন জারি ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত কারফিউ দেয়া হচ্ছে। প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ। জনমনে আতংক। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যার ঘটনা মানুষকে বিমূঢ় ও স্তম্ভিত করে দিয়েছে। এক কথায় সামরিক কর্তাদের বুট এবং ব্যাটনের নিচে তখন সংবিধান, সব মানবিক বোধ, মুক্তিযুদ্ধ সব।

আজকের নবীন প্রজন্ম ভাবতে পারবেনা কতটা অন্ধকার নেমে এসেছিল সেদিন। ঝুঁকিপূর্ণ ওই সময়ে ছাপানো হয়েছিল শিক্ষাবিদ আবুল ফজলের এ দুঃসাহসিক ছোট গল্প ‘মৃতের আত্মহত্যা’। এখানে ইতিহাসের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির পরিণতিতে দগ্ধ, পীঁড়িত ও ক্ষুব্ধ হওয়া একজন নারীর করুণ বিয়োগান্তক ঘটনার হৃদয়ফাঁটা চিত্রায়ন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তার মধ্য থেকে বিদেশে পালিয়ে থাকা একজন খুনীর স্ত্রী, গল্পের নায়িকা সোহেলীর চরিত্রের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতির দগ্ধ প্রাণের পরিস্ফুন ঘটিয়েছেন আবুল ফজল।

এনএম/আরকে

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি