ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৩৬, ১১ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৩:৪৪, ১১ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে এ রোগটি ছড়ায়।  মশাবাহিত ভাইরাল রোগের মাঝে ডেঙ্গু অন্যতম। যা মূলত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলেই বেশি হয়। এডিস নামক মশা দিয়ে এর বিস্তার।

বর্ষাকাল এলে শুরু হয়ে যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ। আর এর জন্য দায়ী এডিস প্রজাতির বিভিন্ন প্রকারের মশা। যারা মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়! শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের নানা দেশে চলছে ডেঙ্গুর মহামারী। বিশ্বে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)- এর তথ্যানুযায়ী বিশ্বে মশাবাহী রোগসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী হলো ডেঙ্গু। গেল ৫০ বছরে ডেঙ্গু বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩০ গুণ।

এবার বিশ্বের একশটিরও বেশি দেশে রোগটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। ফলে এ সব দেশগুলোর জনগণ যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও বেশি ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। 

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পুরো বাংলাদেশেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে কেউ না কেউ। 

এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

জানা গেছে, শুধুমাত্র দক্ষিণ আমেরিকাতেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৬ লাখ মানুষ। এরমধ্যে ব্রাজিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটির নিকারাগুয়ায় গত ৭ মাসে ৫৫ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। 

এছাড়া গত ৫০ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে নাজেহাল হন্ডুরাস। সরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির ৩২টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ২৬টির নির্ধারিত বেডের চেয়ে অতিরিক্ত রোগীতে বোঝাই। 

চলতি বছর ২৮ হাজার লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই শিশু। তাই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে দেশটিতে। বাসাবাড়ি ও গণবসতিপূর্ণ এলাকায় এ রোগ সৃষ্টিকারি এডিস মশা নিধণ ও এ রোগ নির্মূলের নানা কর্মসূচি নেওয়া গ্রহণ করা হয়েছে। 

এ বছর ফিলিপাইনে ভয়াবহ আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ জন্য সে দেশে জাতীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে ডেঙ্গু এলার্ট। সাড়ে চারশোর বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পর এই অ্যালার্ট ঘোষণা করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট করা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা শতকরা ৮৫ ভাগ বেশি।

এছাড়া মালয়েশিয়ায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। 

শনিবার দেশটির উপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী লি বুন চেই বলেন, যদি মশাবাহিত এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হয়, তবে বছর শেষে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অগাস্ট মাসের ৩ তারিখের মধ্যে এদের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর একই সময়ে দেশটিতে ডেঙ্গু রোগে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে আগস্টের প্রথমদিক পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।  শহরাঞ্চলেই ৭০ শতাংশেরও বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছে।  

উপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু মহামারী থেকে রেহাই পেতে তারা বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে মশা প্রজননের কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করছেন তারা।

তিনি বলেন, ফিলিপিন্সে ডেঙ্গু টিকা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায়ও পরবর্তী সময়ে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বিমান ভ্রমণ স্বাভাবিক হওয়ায় এই রোগের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২০১৭-২০১৮ সালে হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু ২০১৯ সালে রোগটির প্রকোপ হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর বিশেষভাবে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

শুধু তাই নয় এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে। ওষুধেও কাজ হচ্ছে না এ রোগে।

১৯৭০এর দশকের দিকে ফ্লু জাতীয় ডেঙ্গু ভাইরাসের মহামারি ৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ বছার প্রাণঘাতি ভাইরাস ছড়িয়েছে ১০০টিরও বেশি দেশে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠি এখন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে।  এছাড়া প্রতিবছর ১০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি