২ অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার
প্রকাশিত : ১৭:৫২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
দেশের প্রথম স্যাটেলাইট 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১'এর সফল উৎক্ষেপণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গেল ১২ মে। উৎক্ষেপণের পর নানা সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি মধ্যে স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল যেন দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ স্থাপন, নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রচার সেবা নিশ্চিত করা যায়।
ইতোমধ্যে সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনগুলো স্যাটেলাইটের আওতায় আনার পরিকল্পনার অনেকেটা বাস্তায়ন হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২ আক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা বলছে,দেশের ৩০টি বেসরকারি এবং চারটি সরকারি টেলিভিশন এখনো পরীক্ষামূকভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে তাদের অনুষ্ঠান এবং সংবাদ সম্প্রচার করছে। আগামী ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে দেশের সবগুলো টেলিটভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ উঠবে। ইতিমধ্যে টেলিভিশনগুলোর সঙ্গে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড।
এবিষয়ে বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ওই দিন চুক্তিপত্র হস্তান্তরের পরেই বেসরকারি টেলিভিশনগুলো আগে যে স্যাটেলাইটের সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল সেটি ছিন্ন করা হবে। তিনি আরো বলেন,এর মাধ্যমে দেশের বছরে অন্তত ছয় মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
বর্তমানে দেশের সবগুলো টেলিভিশনের হংকং ভিত্তিক স্যাটেলাইট কোম্পানি স্টার অ্যালায়েন্সের কাছ থেকে প্রতি মাসে মেগাহার্টজ প্রতি স্পেকট্রাম ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ ডলারে কেনে। একেকটি টেলিভিশন চ্যানেলে চার থেকে ছয় মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম লাগে। এতে মাসে সর্বনিম্ন সাড়ে ১৩ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।
কিন্তু বিসিএসসিএল দেশি টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য প্রতি মেগাহার্টজের দাম এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে যেটি আগামী এক বছর ডিসকাউন্টেড রেটে ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা হবে। এতে চার থেকে ছয় মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের খরচ পড়বে ৬ লাখ ২৮ হাজার থেকে ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
বিসিএসসিএল মূল্য কমিয়ে দেওয়ায় এখন স্টার অ্যালায়েন্সও প্রতি মেগাহার্টজ ২০০০ ডলারে দেওয়ার প্রস্তাব করছে বলে জানাচ্ছে সূত্রগুলো। শাহজাহান মাহমুদ জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকেই আট বছরের মধ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের খরচ হওয়া ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা উঠে আসবে। এদিকে এটিএন বাংলার চিফ ইঞ্জিনিয়ার জাহিরুল ইসলাম আবেদন জানান সম্প্রচার সক্ষমতার দিক থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ খুবই ভালো। সে কারণে ছবির মানও অনেক ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
সবগুলো টিভি চ্যানেল মিলে প্রায় সাড়ে পাঁচ ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি ব্যবহার করবে। তাছাড়া এর আগে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি ডাইরেক্ট টু হোম বা ডিটিএইচ আকাশ ছয়টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়েছে। সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার।
গত ১৯ মে বিসিএসসিএলের সঙ্গে ছয়টি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল–দীপ্ত টিভি, সময় টিভি, যমুনা টিভি, বিজয় বাংলা, বাংলা টিভি এবং মাই টিভি আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করছে। তাছাড়া বিটিভির চারটি চ্যানেলও একইভাবে এই স্যাটেলাইট দিয়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চাম্পিয়নশিপ সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু হয়। পরে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুবাই থেকে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের সম্প্রচারসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন।
উল্লেখ্য, গত বছর ১১ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
টিআরয+
আরও পড়ুন