ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪

এখনই রোহিঙ্গা সংকটের অবসান ঘটাতে হবে: মাহাথির

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মালয়েশিযার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে আশা দুর্দশা অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ ও আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে রোহিঙ্গা সংকটের অবসান ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন ‘আমাদের এ সংকটের অবসান ঘটাতে হবে এবং তা এখনই করতে হবে।’

মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর বাংলাদেশ ও ওআইসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠকে মাহাথির মোহাম্মাদএ কথা বলেন।

আজ এখানে প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ড. মাহাথির বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনো ভাল কিছু নয়। ‘অনেক রোহিঙ্গা ব্যক্তি রাখাইনের অভ্যন্তরীণ-বাস্তচ্যুত শিবিরে (আইডিপি) বাস করছে এবং দিনে দিনে তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।’

তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে মিয়ানমার সরকার এই সঙ্কটের সমাধান করতে রাজি নয়। ‘সুতরাং এটি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই পরিস্থিতি নিয়ে কিছু করতে হবে।’

তিনি বলেন, বিশ্ব যখন অতীতের কুখ্যাত বন্দী শিবিরগুলোর সঙ্গে আইডিপি ক্যাম্পগুলোর মিল খুঁজে পেল, তখন মিয়ানমার সরকার দ্রুত তা অস্বীকার করেছে।

তিনি প্রশ্ন করেন, মিয়ানমারের কাছে গোপন করার মতো কিছু যদি না থাকে, তাহলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘ কর্মকর্তা এবং মানবিক সহায়তা কর্মীদের রাখাইনের পরিস্থিতি দেখতে যেতে বাধা দিচ্ছে কেন?

তিনি বলেন, জাতিসংঘ কর্মকর্তা এবং মানবিক সহায়তা কর্মীদের পরিদর্শনের জন্য অবাধে সেখানে যাতায়াত করতে এবং শিবিরগুলোতে বাস করা মানুষদের সহায়তা করতে দিন। সংকট সমাধানের অযোগ্য হয়ে ওঠার আগেই মিয়ানমারের উচিত তা নিরসন করা। তিনি বলেন প্রত্যাবাসন হওয়া উচিৎ প্রথম অগ্রাধিকার।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু শরণার্থীকে প্রত্যবাসনের জন্য দুইবার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, এর কারণগুলো সুস্পষ্ট। শরণার্থীরা প্রত্যাবাসনকে নিরাপদ মনে না করলে কেউ ফিরে যাবে না।

ড. মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়া প্রত্যাবাসনকে জোর দিয়ে যেতে থাকবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের একটি নিরাপদ স্বতন্ত্র ও মর্যাদাপূর্ণ অধিকার দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদান সম্পন্ন করেই কেবলমাত্র এই সংকট নিরসন করতে হবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ভয়, বিদ্বেষ ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের ইস্যুটিকে ব্যবহার করেছে।

ড. মাহাথির বলেন, সুতরাং শুধুমাত্র নাগরিকত্ব দিতে হবে এই বিবেচনা থেকেই এটি করা হয়েছে যা অগ্রহণযোগ্য। এটা স্পষ্ট যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ড. মাহাথির আরও বলেন, ‘এই ধরণের উদ্যোগ কিভাবে কাজ করবে তবে কি নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীরদের এই ধরণের কর্মকান্ড সিস্টেমের অংশ?’

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে ভূমিকা পালন করা উচিত। এটি ভবিষ্যতে মানবসৃষ্ট দুর্দশা রোধ করার আশা নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই, এর নীরবতা বধিরতারই নামান্তর।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ ছাড়া, সংকটের সমাধান এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে অন্যদের অবশ্যই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ড. মাহাথির বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতিবাচক প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়া ওআইসির প্রশংসা করেছে। অপরাধীরা যে জঘন্য অপরাধ করেছে তা থেকে রেহাই না পায়, এটি নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের বিষয়টি আনার সিদ্ধান্তে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আশা করি, অন্যান্য দেশগুলো ওআইসিকে সমর্থন করবে।

রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার মানবিক সহায়তার কথা তুলে ধরে ড. মাহাথির বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে এবং এর পক্ষে যতটা সম্ভব করবে।

রোহিঙ্গাদের উপর নির্মমতাকে কম্বোডিয়ার গণহত্যার সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা খোলামেলাভাবে এই ব্যাপারে কথা বলি। রাখাইন রাজ্যে যা হয়েছে তা হচ্ছে গণহত্যা।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে গণহত্যা, ব্যাপক গণধর্ষণ ও অন্যান্য বড় ধরনের মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গারা দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’ বাসস

এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি