শেখ হাসিনা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অপরিমেয় প্রতিশব্দ
প্রকাশিত : ১৯:০৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
আজ বাংলাদেশ স্বাধীন। লাল সবুজের এ পতাকা আজ বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সগৌরবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। দীর্ঘ শোষণ ও নিপীড়নে প্রতিবাদী বাঙ্গালিরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বশস্ত্র স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। দেশের প্রতিটি স্বাধীন ধূলিকণায় বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িত। যিনি নেতৃত্ব না দিলে এ ভূখণ্ড কখনও স্বাধীন হতো কি? হতো না।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া দেশের এ অবস্থান কখনই তৈরি হতো না। এ আজ চরম সত্য। ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নিহত বাবা-মা, খুনিদের বুলেটের আঘাতে রক্তে রঞ্জিত তার ভাইয়েরা, শেখ হাসিনা আসলে শত্রুর আগুনের ছাই থেকে উঠে আসা এক মানুষ যিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ। দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩ তম জন্মদিন আজ। ৭২ কে অতিক্রম করে আজ ৭৩‘এ পা দিনের মানবতার এ অগ্রদূত।
তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।
তিনি জাতিকে নতুন এক আশা দিয়েছেন, সেই আশার নাম রুপকল্প-২০২১, বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার সেই আশা। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছে সব বাংলাদেশীকে, এক ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যেখানে সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি থাকবে।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তখন ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ থাকায় ঘাতকের বুলেট নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারা। পরিবারের নিহত সদস্যদের শেষ বিদায়ও জানাতে পারলেন না বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার জন্য দেশে ফেরার প্রতিটি পথ স্বাধীনতাবিরোধীরা রুদ্ধ করে দিয়েছিল। পরে ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন তিনি। শেখ হাসিনার পরবর্তী ইতিহাস, একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কীভাবে বাঙালি জাতির কান্ডারি হয়েছেন তার ইতিহাস।
১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ঐ বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। এ সময় তাঁর ফিরে আসা শুধু শেখ হাসিনার ফিরে আসা নয়, এ সময় ফিরে আসে স্বাধীনতা, ফিরে আসে গণতন্ত্র।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে তিনি বার বার জঙ্গি গোষ্ঠীর এক মাত্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। দেশের জন্য কাজ করে নিজের নীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখায় এ পর্যন্ত ১৯ বার আততায়ীর হামলার শিকার হয়েছেন যার মধ্যে সর্বশেষ ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। এরপরও তার মুখে হাসি ফুটেছে, হাসি ফুটিয়েছেন দেশের জনগনের মুখে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যেই বেঁচে আছেন তিনি।
কোনো মানুষ এক জীবনে কত করতে পারেন। শেখ হাসিনা তারই এক উজ্জল উদাহরণ। একের পর এক দেশ ও বিশ্বজয়ী পদক্ষেপ তার নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়েছে। শান্তি ও মানবতার অগ্রদূত হিসেবে আজ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে মহিমান্বিত একটি নামে রূপান্তরিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ও নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব নেতৃত্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়েছেন মানবতার জন্য কিভাবে কাজ করতে হয়।
শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে পুনরায় সরকারে এসে শেখ হাসিনা বহু আকাংক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন। কয়েকজনের দণ্ড ইতোমধ্যে কার্যকরও করা হয়েছে। তাঁর প্রথম শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যের দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি হয়।
যখন ভারত ও পাকিস্তানে পরমানু অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা চলছিল, তখন (১৯৯৮) তিনি তাদেরকে পরমাণু যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার আহবান জানাতে সেসব দেশ ভ্রমন করেন। দুরদর্শী বিদেশ নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হয়েছেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্য তিনি ইউনেসকো শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৯৮ সালে তিনি নিখিল ভারত পরিষদের কাছ থেকে মাদার তেরেসা পদকও পান। ১৯৯৯ সালের ১৫ মে তিনি হেগ শান্তি পরিষদের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা সেরেস শান্তি পদক পান যা বিশ্ব খাদ্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকার প্রধানদের দেয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য থেকে দেশের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলে যে গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছিল সে গণতন্ত্র তিনি ১৯৯৫ সালে ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। দেশে ফিরে ১৯৯০ পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছর রাজপথে সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল হয় প্রধান বিরোধী দল।
শেখ হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকারে আসীন হয়। সেই সময় তার সরকার যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে, যা ছিলো সেই সময় বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় একাদশতম। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় তাঁর সরকার ২ কোটি বন্যা দুর্গত মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য প্রদান করে। তাঁর নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের আমলে উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমূহ হচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা, এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি।
শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকার গ্রেপ্তার করে। ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে তাঁকে ২০০৮ এর ১১জুন প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যান এবং ৪ ডিসেম্বর দেশে ফিরেন। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ‘দিন বদলের সনদ’এ তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে। জনগনের ভরসা ও বিশ্বাস এই যে, বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতেই বাস্তবায়িত হবে রুপকল্প-২০২১। তাঁর সরকার নিজ উদ্যোগে এবং অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করে যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করবে। একই সঙ্গে ঢাকায় মেট্রো রেল প্রকল্প, দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণ, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭’এ উন্নীতকরণসহ আরও কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালেও টানা তৃতীয়বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
তার দূরদর্শী বৈদেশিক নীতির সুফল হিসেবে ভারতীয় লোকসভায় ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি পাশ হয়েছে। এতে ছিটমহলবাসীর চার শতকের দুঃখ দুর্দশার অবসান হয়। তার শামনামলেই ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ দুইটি ঐতিহাসিক সমুদ্র সীমান্ত মামলায় জয়লাভ করে। তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ১০০ নারীর মধ্যে একজন। নারীদেরকেও উদ্দীপ্ত করতে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নারী শিক্ষায় অবদানের জন্যে তিনি ইউনেসকোর শান্তিবৃক্ষ পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করায় তাঁর নানা উদ্যোগ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদানের জন্যে গত বছর জাতিসংঘ তাঁকে সাউথ সাউথ পুরস্কার দেয়।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ মহয়সী নেতা। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দেশ পরিচালনার নীতিতে প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। সারাবিশ্বে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা শেখ হাসিনা প্রণীত দারিদ্র্য বিমোচন নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। এক কথায় বাংলাদেশের উন্নয়নের পথিকৃৎ হলেন শেখ হাসিনা। এ নাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রেরই এক অপরিমেয় প্রতিশব্দ।
(প্রতিবেদনটি তৈরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য সহায়তা নেওয়া হয়েছে।)
এমএস/
আরও পড়ুন