এখনও বুয়েটে আন্দোলন কেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন
প্রকাশিত : ১৪:১৬, ১২ অক্টোবর ২০১৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির সবগুলোইতো মেনে নিয়েছেন ভিসি। তারপরও নাকি তারা আন্দোলন করবে। কেনো করবে জানি না। এরপর আন্দোলন করার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে?’
আজ শনিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোন দল কর্মীরা অন্যায় করছে আমরা তা দেখিনি। আমরা খুনিকে খুনি হিসেবেই আমরা দেখি। অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী হিসেবেই আমরা দেখি। অত্যাচারীকে অত্যাচারী হিসেবেই আমরা দেখেছি। খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে আমি কারো আন্দোলনেরও অপেক্ষা করিনি, কারো নির্দেশেরও অপেক্ষা করিনি। সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। এদেরকে গ্রেফতার করা এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা। এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশ পড়লো বিপদে। এ ভিডিও ফুটেজ যখন সংগ্রহ করছে তখন তারা বাধা দিয়েছিল। কেন বাধা দিয়েছিল আমি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে পুলিশের আইজিপি ছুটে আসলো কী করবো? আমি বললাম তারা কী চায়? বললেন, তারা কপি চায়। আমি বললাম কপি করে তাদের দিয়ে দাও। তোমরা তাড়াতাড়ি ফুটেজটা নাও। ফুটেজটা নিলেই তো আমরা আসামি চিহ্নিত করতে পারবো, ধরতে পারবো। কে গেছে না গেছে দেখতে পারবো, ধরতে পারবো।’
বুয়েটের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি মেনে নিয়েছে। তারপরও না কী তারা আন্দোলন করবে। কেন করবে জানি না। এরপর আন্দোলন কার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে।’ ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার সময় তিন চার ঘণ্টা সময় নষ্ট না করলে অপরাধীরা আরও আগে ধরা পরত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো কী না, এটার জবাব ওই আন্দোলন যারা করেছে তারা বলতে পারবে, আমি বলতে পারবো না। আমি কিন্তু এক মিনিটও দেরি করি নাই। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এই ধরণের অন্যায় করলে কখনো এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র ও টাকা দিয়ে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ তাদের নষ্ট করেছে। সে সময় অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনটি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুধু জিজ্ঞেস করতে চাই, এত ছাত্র হত্যা হয়েছে কয়টার বিচার কে করেছে? সেই ৭৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে করেছে। আর যখনই আমরা ক্ষমতায় এসেছি তখনই আমরা সাথে সাথে বিচার করেছি। এর বাইরে কেউ আজ পর্যন্ত বলতে পারবে কোনো বিচার হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েট ছাত্রী সাবিকুন নাহার সনি হত্যায় কে প্রতিবাদ করলো? তখন তো আমাদের বুয়েটের যে অ্যালাইমনাই অ্যাসোসিয়েশন তাদেরকে তো নামতে দেখি নাই। প্রতিবাদ করতে দেখিনি তাদের, তখন তারা কথা বলেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সবার কথা বলার অধিকার আছে। বলতে পারে, অন্তত এই সুযোগটা আছে।’
উল্লেখ্য, ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। অভিযোগের সত্যতা উদ্ঘাটনে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলে জানিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৯ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এমএস/
আরও পড়ুন