সুন্দরবন সুরক্ষায় ৪০০ কোটির টাকার প্রকল্প
প্রকাশিত : ১৩:২৭, ১২ নভেম্বর ২০১৯
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষা, বন ব্যবস্থাপনা, বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পর্যটনের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে সুন্দরবন সুরক্ষায় ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার।
এর আগেও গত জুনে এ প্রকল্প গ্রহণের কথা জানা গেলেও দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় তা এগোয়নি। প্রকল্পটি আগামী ৬ মাসের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চলছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন সুরক্ষা প্রজেক্ট এখন পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে, পাস হয়নি। পর্যালোচনা করে কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বড় বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে মোহসীন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রাক্কাল ব্যয় ধরেছিলাম ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা। তবে এখনো ফাইনাল হয়নি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বনের ক্ষয়ক্ষতি রোধ ও যারা বোনের ক্ষতি করত, তাদের হাত থেকে অনেকখানি রক্ষা পাবে।’
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনটির প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে বিশ্ব পরিবেশ সংস্থা ইউনেস্কো, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর করজারভেটিভ অব নেচার ‘আইইউসিএন’ উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবন সুরক্ষার কাজ আরো একধাপ এগোবে বলে মন করছেন মোহসীন চৌধুরী।
বনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় মানুষদের বনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা ও কমানো গেলে সুন্দরবনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে মনে করেন বন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করা না গেলেও, বনের উপর নির্ভরশীলদের বিকল্প কর্মসংস্থান করতে পারলেই তারা সুন্দরবনে আর আসবে না। এ প্রকল্পে সেই ব্যবস্থা থাকছে বলে জানান বন কর্মকর্তা।
তবে, সুন্দরবন সুরক্ষায় বন কর্মকর্তারা বনজীবীদের নিয়ে উদ্বেগ জানালেও, ভিন্নকিছু দেখছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, বনজীবীরা নয় বরং বনের আশেপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রকল্পই বনের ক্ষতির প্রধান কারণ।
যা আছে এ প্রকল্পে-
-সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে পুকুর খনন, টহলফাঁড়ি নির্মাণ, ফাইবার বডি ট্রলার ক্রয়, পন্টুন গ্যাংওয়ে নির্মাণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ আধার এবং স্টাফদের প্রশিক্ষণ প্রদান।
-সুন্দরবন নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর টেকসই জীবিকা নির্বাহ নিশ্চিতকরণে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০,০০০ নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ৩০,০০০ সম্পদ সংগ্রহকারীর আইডি কার্ড প্রদান।
- সহব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে সুন্দরবন সুরক্ষায় সহায়তা করার লক্ষ্যে কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপের সদস্যকে ভাতা প্রদান।
-সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভরাট হয়ে যাওয়া খাল/ নদীসমূহ পুনর্খনন করা।
-বিজ্ঞানভিত্তিক বন-ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের বনজসম্পদ, মৎস্যসম্পদ, বাস্তসংস্থান সংক্রান্ত সার্ভে ও তথ্য সংগ্রহ করা।
এদিকে, সম্প্রতি বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র তাণ্ডব থেকে আবারও ‘রক্ষাকবচ’ হিসাবে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। এ বন না থাকলে সাগর থেকে উৎপন্ন দুর্যোগ বাংলাদেশকে ধুয়ে নিয়ে যেতে কোন দ্বিধা করত না বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
খুলনা বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন জানান, এবারের ঘূর্ণিঝড়‘বুলবুল’র কারণে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। বুলবুল’র আঘাতের সময় সুন্দরবনে জোয়ার থাকায় বেশি উচ্চতা নিয়ে পানি আঘাত করতে পারেনি।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় দশমিক ১ শতাংশের জীবিকা এ বনের ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের আয়তন হওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কিলোমিটার। দুইশ' বছর আগের হিসেবে এমনটি দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এর আয়তন হয়েছে পূর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস।
জরিপ মোতাবেক, বর্তমানে সুন্দরবন এলাকায় ১০৬ বাঘ ও ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে।
১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন ‘রামসার স্থান’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসেন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়। সুন্দরবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে তারা প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে থাকে।
এআই/
আরও পড়ুন