‘শাসনকাজে বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন নয়’
প্রকাশিত : ২২:১২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২২:২১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা
রাষ্ট্রের শাসনকাজে বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। একইসঙ্গে তারা বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইন বা নীতিমালা অনতিবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে বলে দাবি তোলেন। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।
সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ মুক্ত আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি সচিবালয় স্থাপন করা উচিত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।
হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন-এর আয়োজনে এই আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিচারপতি মো. আবদুল মতিন বলেন, ‘ন্যায়বিচার মানে মনিবের আনুগত্য নয়, বরং আইনের আনুগত্য। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বার এবং বেঞ্চের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা করা প্রয়োজন। আমাদের চরিত্রে ও অনুভূতিতে স্বাধীনতার বোধ থাকা প্রয়োজন। তাহলেই সত্যিকারে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশাবাদী হব যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন হবেই। আমরা কাকে খুশি করব, কাকে বিরাগভাজন করব, তা না ভেবে আমরা যদি বলি এখানে আইনের শাসন থাকবে, তাহলে আমাদেরই সজাগ থাকতে হবে, দারোয়ানের মতো কাজ করতে হবে।’
এদিকে, বিচার বিভাগের মধ্যে শাসন বিভাগের কাজ আসা উচিত নয় উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি সচিবালয় স্থাপন করা উচিত, যাতে ওভারলেপিং না হয়। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ম্যাপ তৈরি করা হয়, সেটা মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এই ‘টু অ্যান্ড ফ্লো’ জিনিসটা খুব একটা প্রয়োজনীয় হয় না। এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটা মূল্যবান সময় নেয়।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিচারকদের শাসনকাজে অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন নয়। কেননা, বিচার বিভাগ সরাসরি নিয়োগ থেকে শুরু করে অপসারণ করার মতো ক্ষমতা রাখেন। স্বাধীনতার পর থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে অর্জন কম নয়। তবে এই অর্জন যতটা চাই, ততটা হয়নি। অর্জন হয়নি বলে কথা বলতে হবে। ন্যায়বিচার দৃশ্যমান হওয়া উচিত।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহসভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যার মাধ্যমে নিরপেক্ষ, নির্ভরযোগ্য ও আস্থাশীল বিচার পাওয়া যাবে। বিচারকার্য পছন্দ হলে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন আর বিচার অপছন্দ হলে বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ নয়—এটা কিন্তু শোভনীয় না। বিচার বিভাগে নিয়োগ একটি পৃথক খাত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়াও এই মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে দেওয়া এখন একটি বৈশ্বিক প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিশ্বে যে যে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনকাল আসছে, তারা প্রথম টার্গেট করছে বিচার বিভাগকে, কেমন করে বিচার বিভাগকে দুর্বল করা যায়।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘গত এক যুগের অভিজ্ঞতায় এটা পরিষ্কার যে মানসিক জগতে পরিবর্তন আনা এবং অন্তরে পৃথক্করণের চেতনা ধারণ করা অনেক বেশি জরুরি। শুধু নির্বাহী বিভাগই পৃথক্করণ নিশ্চিত করতে পারবে না।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে আরও কথা বলেন, সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ প্রমুখ।
এ সভায় সভাপতির বক্তব্যে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য বেশি নিবেদিত—এতটা প্রয়োজন আছে কি না, তা প্রশ্নের দাবি রাখে। উন্নয়নে শরণার্থী যেন আমরা না হয়ে যাই, সেদিকে লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়। সামনের সময়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুফল সমাজের সবাই সমানভাবে ভোগ করতে পারবে, এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’
এনএস/
আরও পড়ুন