ঢাকা, শুক্রবার   ১১ অক্টোবর ২০২৪

স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে অপচেষ্টা করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২০:৪০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তব্যরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তব্যরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২৫ মার্চ যখন বাঙ্গলীর ওপর পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে তখন জাতির পিতা ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পিলখানায় তৎকালীন ইপিআরকে এ ঘোষণা পাঠানো হয় সারা দেশে তা পাঠানোর জন্য। এরপর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে রাজারবাগ থেকে সে ঘোষণা জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম বেতার থেকে অনেককেই এ দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে কাউকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর অপচেষ্টাও করা হয়েছিল।’ 

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশই অসহযোগ আন্দোলনে যুদ্ধের মধ্যমে স্বাধীন হওয়া পৃথিবীর এক মাত্র দেশ। এটি বঙ্গবন্ধুই পেরেছিলেন। এমন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক জাতির পিতা দিয়েছিলেন, যেখানে গণভবনে বাঙ্গালী বার্বুচিও রান্না করে পাকিস্তানের শাসক ইয়াহিয়া খানকে খাওয়ায়নি। এ নিয়ে তখন ৩২ নম্বরে ফোন এসেছিল যেন বাবুর্চি একটু রান্না করে তাকে খাওয়ায়।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৬ দফা বানচালের জন্য পাকিস্তান চেষ্টা করেছিল। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়া হয়নি। পাকিস্তানিরা এটা সহ্য করতে পারেনি যে, বাঙ্গালীর হাতে ক্ষমতা থাকবে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে আইয়ুব খান বাধ্য হয়েছিলেন। তখনই বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা করেন কিভাবে দেশকে স্বাধীন করা হবে। তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। ৭ মার্চে তার ভাষণের মধ্যে সকল দিক নির্দেশনা ছিল। হাজার বছরের ইতিহাসে এমন বক্তব্য কেউ দিতে পারেননি। ইউনেস্কো এ ভাষণকে শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভাষণের মধ্যেমেই তিনি সকল ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়লে স্বাধীনতার ঘোষণা জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। জাতির পিতা পিলখানায় তৎকালীন ইপিআরকে ঘোষণা পাঠান। এ ঘোষণা সারা দেশে পাঠানোর দায়িত্বে ছিলেন চার জন। তারা পরে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাদের হত্যা করা হয়। অনেক অত্মত্যাগের মাধ্যমে আমারা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’

স্বাধীনতার জন্য মুক্তি সংগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে কূটচালে লর্ড ক্লাইভ পরাজিত করে এবং বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। ঠিক সেই সূর্য উদিত করার জন্যই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সংগ্রাম শুরু করলেও, তিনি জানতেন—বাঙালি জাতি শোষিত-বঞ্চিত, অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে; যাদের নিজস্ব বাসস্থান নেই, খাবারের নিরাপত্তা নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষা নেই। সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত। তার চিন্তা ছিল এই জাতির ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করবেন। জাতিকে গড়ে তুলবেন। এমন একটি দেশ গড়ে তুলবেন, যে দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করেতে পারে। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করতে গিয়ে বারবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তিনি সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বঞ্চনার হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তি দেয়া, বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র ভূমি গড়ে তোলা, বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে মর্যাদা দেয়া—এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে স্বাধীন করার জন্য জাতির পিতা অনেক ঝুঁকি নিয়েছেন। তিনি ধীরে সুস্থে কাজ করেছেন। পত্যেকটা পদক্ষেপ হিসাব করে নিতেন। ছত্রলীগ ছিল অগ্রগামী হিসেবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি জাতিকে অসহযোগ আন্দোলন থেকে সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে নিয়ে গিয়ে বিজয় অর্জন করা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু তা করেছিলেন।’

৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কারাবন্দি জাতির পিতার প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান জাতির পিতার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছিলেন। তবে ভুট্ট ক্ষমতায় এসে সেই সাহস করেনি। ভুট্ট জানত বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি না দিলে তার রক্ষা নাই। তিনি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।’

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী রীগ সভাপতি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা। স্বল্প উন্নত দেশে তিনি বাংলাদেশকে এনেছিলেন। একটা সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। যখন দেশকে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন, তখনই তাকে হত্যা করা হয়।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনা বাংলাদেশের কেউ জানতে পারল না। ওই লাশ ৩২ এ পড়েছিল। এত বড় সংগঠন এত নেতা কেউ সাহস পেল না। কেন এমন হলো তার উত্তর আজও পাই নাই। আমার অবাক লাগে। এরপর ১৮টি ক্যু হয়েছিল। যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করা হয়েছিল। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংস করা হয়েছিল। ২১ বছর বাংলাদেশকে ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। শত বাধা অতিক্রম করে আমরা সরকারে এসেছিলাম। আমরা ক্ষমতা এসে দারিদ্রের সীমা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আমরা উন্নতি করেছি। এতে গড় আয়ুও বেড়েছে।’
 
এ সময় তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের একটি লাইন কোট করে তিনি বলেন, সাত কোটি মানুষকে সত্যিই দাবায়ে রাখা যায়নি। বাঙ্গালী বিজয়ীর বেশে সব ক্ষেত্রে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এমএস/এনএস


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি