ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

হাস্যরসে মাতিয়ে রাখতেন বঙ্গবন্ধু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:০৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১০:৪৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

সঙ্গীদের হাস্যরসে মাতিয়ে রাখতেন বঙ্গবন্ধু

সঙ্গীদের হাস্যরসে মাতিয়ে রাখতেন বঙ্গবন্ধু

আকৈশোর কেটেছে আন্দোলনের মধ্যেই। কিন্তু শত রাজনৈতিক কূটচাল, ষড়যন্ত্র, জেল-জুলুমের কঠিন দিনগুলোতেও রঙ্গরসপ্রিয় মনটিকে হারিয়ে ফেলেননি বঙ্গবন্ধু। যখনই সুযোগ পেয়েছেন স্বভাবসুলভ রসিকতায় মাতিয়ে রেখেছেন সঙ্গীদের। তেমনই হাস্যরসের কয়েকটা ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো- 

খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ
সময়টা ১৯৬৭। বঙ্গবন্ধু তখন কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। পুরনো ২০ সেলের কয়েকজন ছাত্র বন্দি কিছুদিন ধরে বলছে খিচুড়ি খাবে। বেশ কয়েক দিনই আবদারটা করেছে তারা, কিন্তু জেলখানায় কোথায় চাল-ডাল পাবেন! তাই তেমন একটা গুরুত্ব দেননি বঙ্গবন্ধু। নূরুল ইসলাম, নূরে আলম সিদ্দিকীরা নাছোড়, খিচুড়ি আদায় করতেই হবে। কয়েকজন মিলে রীতিমতো ‘খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে ফেলল তারা। 

জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর পাকঘরের কাছে একটা কাঁঠালগাছ আছে, একদিন হঠাৎ সেখানে একটা পোস্টার ঝুলতে দেখা গেল। খবরের কাগজে কালি দিয়ে তাতে লেখা ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, খিচুড়ি দিতে হবে।’ নিচে লেখা ‘খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদ’। 

হাতের লেখা দেখেই চিনে ফেললেন বঙ্গবন্ধু— নূরুল ইসলামের কাজ। লিখে কোনও কয়েদিকে দিয়ে কাঁঠালগাছে ঝুলিয়েছে। মাঝে দু-একবার স্লোগানও শোনা গেল, ‘খিচুড়ি দিতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু তাদের ডেকে কৃত্রিম তিরস্কার করলেন, ‘এসব দাবি টাবি চলবে না। দরকার হলে মোনেম খানের পন্থা অবলম্বন করব।’ খুব একচোট হাসাহাসি হলো।

হঠাৎ একদিন দাবি পূরণের সুযোগ মিলে গেল। ডিআইজি প্রিজনের অনুমতি নিয়ে কয়েক সের চাল, ডাল, তেল, ঘি, ডিম, তরকারি, চা, চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি পাঠিয়ে দিলেন রেণু। এদিকে কয়েক দিন না খেয়ে কয়েকটা ছোট মুরগির বাচ্চা ও কিছু ডিম জোগাড় হয়েছিল। ওই দিন বিকেলেই বঙ্গবন্ধু খিচুড়ি আন্দোলনকারীদের ডেকে বলে দিলেন, ‘যাহা হউক তোমাদের ভাবির দৌলতে তোমাদের খিচুড়ি মঞ্জুর করা গেল। আগামীকাল খিচুড়ি হবে।’

খিচুড়ি পাকের জোগাড়ে নামা হলো পরের রোববার সকাল থেকে। বঙ্গবন্ধুই হেড বাবুর্চি, কী করে পাকাতে হবে দেখিয়ে দিলেন কয়েদি বাবুর্চিকে। ডিম ভাজা, ঘি ও অল্প অল্প মুরগির গোস্তও হলো। গোসল করে খেতে বসে দেখা গেল, পানি একটু বেশি হয়ে যাওয়ায় জিনিসটা একদম দলা দলা হয়ে গেছে। খিচুড়ি না বলে একে বরং ডাউল-চাউলের ঘণ্ট বলাই ভালো। উপায় নাই, খেতেই হবে, কারণ বঙ্গবন্ধু নিজেই তো বাবুর্চি। কিছু ঘি দিয়ে কোনওমতে খাওয়ার মতো করা গেল। শাহ মোয়াজ্জেম, নূরে আলম, নূরুল ইসলামরা খেয়ে বলল, ‘মন্দ হয় নাই।’ বঙ্গবন্ধু একটু হেসে বললেন, ‘আর আমার মন রাখতে হবে না। আমিই তো খেয়েছি।’ যা হোক, এভাবে খিচুড়ি সংগ্রাম পরিষদের দাবি আদায় হলো। ২০ সেল ও আশপাশের সবাইকেই কিছু কিছু দেয়া হলো।

শাড়ি ছিনতাই
বাংলাদেশ সফরে আসার সময় মুজিব মন্ত্রিসভার প্রত্যেক সদস্যের স্ত্রীর জন্য একটি করে শাড়ি নিয়ে আসেন ইন্দিরা গান্ধী। চলে যাওয়ার আগের দিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এই মর্মে অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন যে, স্বহস্তে এসব শাড়ি মন্ত্রীদের হাতে তুলে দিতে চান তিনি। বঙ্গভবনে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। মাঝে একটা টেবিল দিয়ে গোল করে প্রত্যেক মন্ত্রীর জন্য চেয়ার পাতা হলো। পাশাপাশি বসলেন বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী। একসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং উঠে প্রত্যেক মন্ত্রীর হাতে শাড়ির প্যাকেট উপহার দিলেন। 

ইন্দিরা গান্ধী ফের আসন গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব জলদগম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘জেনারেল ওসমানী, ফণিদা আর ড. মফিজ চৌধুরী, আপনারা তিনজন শাড়ির প্যাকেটগুলো আবার টেবিলে রেখে আসুন।’ তিনজনই নেতার হুকুম পালন করলেন। বঙ্গবন্ধু এবার গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘জহুর ভাই (চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী), আপনি ওই শাড়ি তিনটা নিয়ে নেন।’ কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একমাত্র মিসেস গান্ধী ছাড়া সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। ইন্দিরা গান্ধী এভাবে একযোগে সবার হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে বঙ্গবন্ধু জানালেন, ‘জেনারেল ওসমানী ও ফণিদা চিরকুমার এবং ড. মফিজ বিপত্নীক আর জহুর আহমদ চৌধুরীর একাধিক বেগম বর্তমান।’ এবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই হাসলেন আরেক দফা।

পান্তা ভাত
১৯৭২ সালে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে সোভিয়েত ইউনিয়ন গেছেন বঙ্গবন্ধু। মস্কোতে তার আবাস ছিল ক্রেমলিন। পরাক্রমশালী জারদের এই আবাসস্থল আসলে ৩১টি প্রাসাদের সমষ্টি। আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে ক্রেমলিনে তারা যেন ‘দুদিন কা বাদশাহ’। শুধু একটাই অসুবিধা, প্রতি বেলায় অন্য অনেক খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে টেবিলে নিয়মিত হাজির পোলাও আর কোরমা, এমনকি সকালের নাশতায়ও গরম পোলাও আর কোরমা! তারপর প্লেটভর্তি ক্যাভিয়ার আর টোস্ট। তারপর ডিম, রুটি, কাটলেট ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু একদিন সাগ্রহে জিজ্ঞেস করলেন, ‘প্রতি বেলা কেন এরা পোলাও-কোরমা পরিবেশন করে।’

সফরসঙ্গী কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী বললেন, ‘স্যার, আমার ধারণা, এটি বাংলাদেশে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত পপভের কীর্তি। তিনি নিশ্চয়ই তার কর্তৃপক্ষকে উপদেশ দিয়েছেন, এরা বাঙালি, ভাত-তরকারি খুব ভালোবাসে। মস্কোতে এই পোলাও-কোরমা বোধ করি ভাত-তরকারিরই রূপান্তর।’

একগাল পাইপের ধোঁয়া ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর সরস উক্তি, ‘ভাগ্যিস, রাষ্ট্রদূত পপভ পান্তা ভাতের খবর পাননি। তাহলে তো রাতেও খেতে হতো পান্তা ভাতের রূপান্তর!’

আপদ-বিপদ-মুসিবত ও ভুসি
শেখ মুজিবুর রহমানও রসিকতা করে ঘনিষ্ঠজনদের বিচিত্র সব নাম রাখতেন। মূসা (এ বি এম মূসা) জানাচ্ছেন, তাদেরই তিন সাংবাদিক বন্ধুকে বঙ্গবন্ধু নাম দিয়েছিলেন আপদ, বিপদ ও মুসিবত। ফয়েজ আহমদকে তিনি ডাকতেন আপদ, মূসাকে বিপদ আর আবদুল গাফফার চৌধুরীকে ডাকতেন মুসিবত বলে!

শুধু তা-ই নয়, ফেনীর তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মী রুহুল আমিনকে তিনি নাম দিয়েছিলেন ভুসি! কারণ তিনি ভুসির ব্যবসা করতেন।

রুহুল আমিন সুযোগ পেলেই এ বি এম মূসার কাছে তার অপ্রাপ্তির কথা শুনিয়ে আক্ষেপ করে বলতেন, ‘আমার কিছু হলো না, দেশ ও দলের জন্য এত কিছু করেছি, সর্বস্বান্ত হয়েছি। মুজিব ভাই প্রধানমন্ত্রী হলেন, অথচ আমি কিছুই পেলাম না।’

রুহুল আমিনের ঘ্যানঘ্যানে বিরক্ত হয়ে মূসা একবার তাকে নিয়ে এলেন ধানমণ্ডি। বঙ্গবন্ধু তাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন। তারপর ‘ওরে আমার ভুসি এসেছে’ বলে হৈচৈ করে উঠলেন। রুহুল আমিন কিন্তু যে কথাগুলো বলার জন্য এসেছিলেন, ভুলে গেলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে যতই বলেন ‘কেমন আছিস, কোনও অসুবিধা নেই তো?’ রুহুল আমিন ততই তোতলান আর বলেন, ‘ভা-ভা-ভালোই আছি। ক-ক-কোনও অসুবিধা নাই।’

এভাবেই প্রায় ৩০ মিনিট কথোপকথন চলল। কিন্তু রুহুল আমিন মুখ ফুটে কিছুই চাইতে পারলেন না। ফেরার পথে মূসা খোঁটা দেন, ‘কী, এত প্যানপ্যানানি গেল কই? কিছুই তো চাইতে পারলে না!’

রুহুল আমিন আমতা আমতা করে বললেন, ‘কী করব, নেতাকে দেখে যে সবই ভুলে গেলাম!’
 
সরাইলের সারমেয়
গণভবনে সান্ধ্য আসর জমে উঠেছে। এমন সময় তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এসে উপস্থিত। তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, ‘নেতা, গাফ্ফার আমার সম্পর্কে কী লিখেছে দেখেছেন? লিখেছে, আমি নাকি সরাইলের কুকুর।’

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তখন ‘দৈনিক জনপদ’-এর সম্পাদক। তাহেরউদ্দিন ঠাকুর সেই পত্রিকার সরকারি বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেয়ায় গাফ্ফার চৌধুরী তথ্য মন্ত্রণালয়ের কড়া সমালোচনা করে প্রতিমন্ত্রীকে ‘সরাইলের সারমেয়’ লিখেছেন। প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের আদি বাড়ি সরাইল। ফলে তার সম্মানে ঘা লেগেছে।

নালিশ শুনে বঙ্গবন্ধু গম্ভীর হয়ে গেলেন। তারপর গাফ্ফার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় বললেন, ‘অন্যায় করেছ! তাহেরকে সরাইলের কুকুর বলা ঠিক হয়নি। জানো কত প্রজাতির কুকুর আছে?’ এরপর তিনি নিজেই ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলেন, ‘বিলেতি মেমসাহেবরা কোলে বসিয়ে ল্যাপডগকে আদর করে। অস্ট্রেলিয়ায় রাখালেরা ভেড়ার পাল সামলায় শেফার্ড কুকুর লেলিয়ে দিয়ে। ইউরোপে অ্যালসেসিয়ান কুকুর বাড়ি পাহারা দেয়। দুর্ধর্ষ এসব অ্যালসেসিয়ান অনেকটা সরাইলের কুকুরের মতো দেখতে, পাতলা লম্বা ভয়ংকর-দর্শন।’

বঙ্গবন্ধু একটু থেমে গাফ্ফার চৌধুরীকে বললেন, ‘আমার ভজহরির মতো এমন ঘাড়ে-গর্দানে নাদুসনুদুস ফর্সা, তবে হ্যাঁ, রাগলে লালমুখো হয়ে যায়, এক ধরনের কুকুরও আছে বৈকি। সেগুলো হলো বুলডগ, লালমুখো, মোটাতাজা শরীর।’

এরপর তিনি আড়চোখে সুদর্শন, নাদুসনুদুস তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমিভরা গলায় বললেন, ‘গাফ্ফার, খবরদার এরপর কারো চেহারাসুরত নিয়ে ঠাট্টা করবা না।’

কথা শুনে উপস্থিত সবাই মাথা নিচু করে হাসি সামলানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মাথা তোলার পর সেখানে আর লালমুখো ঠাকুরমশাইকে দেখা গেল না। তিনি ততক্ষণে পালিয়ে বেঁচেছেন।

আইয়ুবের জানাজা
১৯৬৯-এর উত্তাল সময়। আইয়ুব খানের প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক বয়কট করলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো ও মওলানা ভাসানী। বঙ্গবন্ধু বৈঠকে যোগ দিতে প্রস্তুত। উত্তপ্ত রাজনীতির সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচে কে এগিয়ে কে পিছিয়ে—শুরু হয়ে গেছে তার হিসাব-নিকাশ।

মওলানা বললেন, ‘মুজিবর মিয়া, তুমি আরটিসিতে (গোলটেবিল বৈঠক) যাইও না।’

মুজিব সিদ্ধান্তে অটল। বললেন, ‘হুজুর, আমি তো কথা দিছি। মামলা উঠাইয়া নিলে রাওয়ালপিণ্ডি যামু।’

‘ভুট্টো যাইব না। আমিও বয়কট করছি,’ বোঝানোর চেষ্টা করলেন মওলানা। ‘তুমি না গেলেই আরটিসি শ্যাষ।’

‘তবুও ওয়াদা রাখতে দোষ কি?’ মুজিব বললেন।

‘মুজিবর মিয়া, রাওয়ালপিণ্ডি যাইয়া তুমি আরটিসি ভাঙবা ক্যামনে?’

‘আমি ছয় দফার সব কিছু—দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন দুই হাতে জাবড়াইয়া রাখুম। হুজুর, তাহলেই তো গোলটেবিল শ্যাষ!’

‘আর পিণ্ডি যাইয়া লাভ আছে?’ মওলানা শেষ যুক্তি শোনালেন, ‘প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তো এখন মরা লাশ!’

মুচকি হেসে মুজিব পাল্টা যুক্তি দিলেন—‘হুজুর, জানাজা পড়তে দোষটা কি?’

বলা বাহুল্য, মওলানা ভাসানীর দোয়া নিয়েই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এবং ছয় দফা দাবি থেকে একচুলও সরে আসেননি। ফলে ভেস্তে গিয়েছিল বৈঠক।

লুঙ্গিকাণ্ড
আলজেরিয়া যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গীদের কাছে ফরেন অফিস থেকে চিঠি এলো, ‘আপনারা লুঙ্গি এবং মেসওয়াক নিতে পারবেন না।’ মেসওয়াক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ব্যবহার করেন না। কিন্তু লুঙ্গি ছাড়া যে ঘুমোতে পারেন না। তাহলে উপায়? বঙ্গবন্ধুর কাছে ছুটলেন। নানা আলাপের ফাঁকে সুযোগ মতো বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু, আমার যাওয়ার একটা অসুবিধা আছে।’

‘কী অসুবিধা?’

‘আপনার ফরেন অফিসার নির্দেশনা দিয়েছেন, লুঙ্গি নেওয়া যাবে না। কিন্তু লুঙ্গি ছাড়া আমি তো ঘুমোতে পারি না। কী করি?’

তিনি বললেন, ‘আরে, নিবি নিবি! আমিও কি লুঙ্গিছাড়া ঘুমাইতে পারি নাকি। আমিও তো লুঙ্গি নিমু!’ গাফ্ফার চৌধুরী আলজেরিয়ায় গিয়ে দেখলেন, সত্যি সত্যি হোটেলে লুঙ্গিই পরছেন বঙ্গবন্ধু!

যার কাজ তারই সাজে
১৯৭২ সালের কথা, সবে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছে, কিন্তু মন্ত্রীদের দপ্তর তখনো বণ্টন হয়নি। এ নিয়ে এ বি এম মূসা একটুখানি কৌতূহল প্রকাশ করায় বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম গাম্ভীর্যের সঙ্গে বললেন, ‘সব এখন বলব না, একটু পরই জানতে পারবা। উপযুক্ত ব্যক্তিকেই যথাযথ দায়িত্ব দিয়েছি। তবে একটা দপ্তর নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অনেক ভেবেচিন্তে সেটা জহুর [আহমদ চৌধুরী]-র কাঁধে চাপালাম। দপ্তরটি হচ্ছে স্বাস্থ্য ও জন্মনিয়ন্ত্রণ (পরবর্তীকালে পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়)। ভেবে দেখলাম, আমার মতো সারা জীবন জেল খাইটা তার শরীরডা খ্যাংরা কাঠির মতো হইয়া গেছে। সব ডাক্তারকে সে মাইনষের স্বাস্থ্য ভালো করার তাগিদ দিতে পারব। সে আবার দুই বউয়ের ১৪টি বাচ্চা নিয়ে হিমশিম খাইতাছে। বেশি বাচ্চা হওয়ার জ্বালাও সে-ই ভালো বোঝে। তাই তারে জন্মনিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছি।’

তেল পাওয়ার পূর্বশর্ত
বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান করতে চায় কিছু বিদেশি কোম্পানি। তাদের সঙ্গে মন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসলেন বঙ্গবন্ধু। বৈঠকের পর গণভবনের পুবের বারান্দায় যথারীতি বসেছে আড্ডা। সেখানে গ্যাস অনুসন্ধান বিষয়েও আলাপ উঠল। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ওদের বলেছি, শুধু গ্যাস নয়, আমাদের তেলও আছে। অতীতে এ নিয়ে কোনো অনুসন্ধান হয়েছি কি না জানতে চাইলে বলেছি, তা হয়নি, তবে আমি নিশ্চিত, আমাদের তেল আছে। আরব দেশগুলোয় তেল পাওয়ার যে দুটি ক্রাইটেরিয়া রয়েছে, তা আমাদেরও আছে।’ কী সেই বৈশিষ্ট্য? ‘এক. মুসলিম দেশ হতে হবে। দুই. ইট মাস্ট বি হেডেড বাই শেখ। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানকে শেখ হতে হবে। দুটোই আমাদের আছে,’ কথাগুলো বলে নিজেই হো হো হেসে উঠলেন বঙ্গবন্ধু।

সূত্র: শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা’, এম আর আখতার মুকুলের ‘মহাপুরুষ’, ফারুক চৌধুরীর ‘জীবনের বালুকাবেলায়’, এ বি এম মূসার ‘মুজিব ভাই’।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি