বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ বেড়ে সোয়া কোটি টাকা হচ্ছে
প্রকাশিত : ০৯:১২, ২১ জানুয়ারি ২০২০
বিমান দুর্ঘটনায় কোনও ব্যক্তির মৃত্যু বা আঘাত জনিত ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাবসহ ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন, ২০২০’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
নতুন আইনে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেশি টাকায় ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা (প্রায়) থেকে বাড়িয়ে এক কোটি সতের লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা (প্রায়) করা হয়েছে।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা আকাশ পথের যাত্রীদের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে মন্ট্রিল কনভেনশন-১৯৯৯ এর আলোকে এই আইনটির খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, মন্ট্রিল কনভেনশনটি অনুস্বাক্ষর এবং যাত্রীর মৃত্যু, আঘাত ও মালামাল নষ্ট/ হারানোর ক্ষতিপূরণ প্রদান সহজীকরণের জন্য মন্ট্রিল কনভেনশনের আলোকে আকাশ পথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন, ১৯৯৯) আইন, ২০১৯-এর খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটি প্রণীত হলে হলে যাত্রীর মৃত্যু/আঘাত, ব্যাগেজ ও কার্গো ক্ষতি/হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের হার পূর্বের থেকে অনেক বৃদ্ধি পাবে। এ সংক্রান্ত আইনটি প্রণীত না হওয়ায় ২০১৭ সালে নেপাল বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা নাম মাত্র ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সচিব বলেন, পুরাতন আইনে (ওয়ারশ কনভেনশন) মৃত্যু বা আঘাত জনিত ক্ষতিপূরণের হার ছিল ২৫ লাখ ফ্রাক্সক বা বাংলাদেশি টাকায় ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা প্রায়। নতুন আইনে ক্ষতিপূরণ মিলবে এক লাখ এসডিআর বা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৪ মার্কিন ডলার। যা দেশি টাকায় প্রায় এক কোটি সতের লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা হবে।
ফ্লাইট বিলম্বের কারণে পরিবহনকারীর দায় হবে এক হাজার এসডিআর বা ৫ হাজার ৭৩৪ মার্কিন ডলার। যা অতীতে ২০ ডলার ছিল। ব্যাগেজ হারানো বা বিনষ্টের জন্য অতীতের দায় ২০ মার্কিন ডলার পার কেজি থেকে বেড়ে এক হাজার এসডিআর বা এক হাজার ৩৮১ ডলার পার কেজি হবে। এছাড়া কার্গো বিনষ্ট বা হারানোর জন্য ২০ ডলার পার কেজি থেকে নতুন আইনে ক্ষতিপূরণের অংশ বেড়ে ১৭ এসডিআর বা ২৪ ডলার পার কেজি হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে, যাত্রীর সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এই আইনের বিধানবলি মোতাবেক ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগ করা যাবে। সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজের পক্ষ/বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে অথবা আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে।
তিনি বলেন, আকাশপথে অভ্যন্তরীণ পরিবহনে বিলম্ব, ক্ষয়-ক্ষতি, মৃত্যু ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এই আইন মন্ট্রিল কনভেনশন এবং এর আলোকে প্রণীত প্রটোকলের সংশোধনীসমূহ নিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার প্রয়োগ করতে পারবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্যমান আইনকে যুগোপযোগীকরণের অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০২ ‘-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি অনুমোদিত হলে নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যেটি বিদ্যমান ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩’তে ছিল না। তিনি বলেন, নিবন্ধন কতৃর্পক্ষের অর্থদণ্ড প্রদানের ক্ষমতা না থাকায় অতীতে সামান্য অপরাধের জন্য এজেন্সির নিবন্ধন স্থগিত করা বা বাতিল করতে হত। কিন্তু নতুন আইনে অর্থদণ্ড প্রদানপূর্বক এজেন্সি নবায়ন করা যাবে। নতুন আইনে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো শাখা অফিস খুলতে পারায় জনগণের কাঙ্খিত সেবা প্রাপ্তি সহজ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সচিব বলেন, মন্ত্রিসভায় এদিন ‘আয়োডিনযুক্ত লবন আইন,২০২০’-এর খসড়া এবং ‘চট্টগ্রাম বন্দর কতৃর্পক্ষ আইন, ২০২০’-এর খসড়ার ও নীতিগত অনুমোদন প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, ‘ভোজ্য লবণে আয়োডিন যুক্তকরণের মাধ্যমে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর আয়োডিন স্বল্পতার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধই আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য। নতুন আইনে ‘জাতীয় আয়োডিনযুক্ত লবণ কমিটি গঠন,’ পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন সেল গঠন,’ ‘লবণ উৎপানকারীর প্রশিক্ষণ,’লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা’ এবং মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯’র প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে বলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব উল্লেখ করেন। আর চট্টগাম বন্দর পরিচালনার আইনটি যুগোপযোগীকরণে ‘চট্টগ্রাম বন্দর কতৃর্পক্ষ আইন, ২০২০’ খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলেন তিনি।
আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, এদিনের মন্ত্রিসভায়-৬ এপ্রিল তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবসের পাশাপাশি ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ উদযাপনের প্রস্তাব অনুমোদন এবং নন-ক্যাডার ৮ম ও তদুর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টন পদ্ধতি স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যে তৎসংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাব ও অনুমোদিত হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৯ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিবেদনও উপস্থাপিত হয় এবং এই সময়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৩ শতাংশ। একইসঙ্গে বেশ কয়েকজন মন্ত্রির নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের বিদেশ সফর এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে যোগদানের বিষয়েও মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ করা হয়।
আরও পড়ুন