ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা তরুণদের প্রশিক্ষণে ২৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প

আসিফ শওকত কল্লোল 

প্রকাশিত : ২৩:০৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২৩:০৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

রোহিঙ্গা তরুণদের জন্য ২৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প

রোহিঙ্গা তরুণদের জন্য ২৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প

কক্সবাজারে সরকার পরিচালিত মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দু’টি ক্যাম্পে অবস্থান নেয়া ৬০ হাজার তরুণ-তরুণী যাতে সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে না পারে, এজন্য ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকার এক প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি)।

সূত্র জানায়, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘এমারজেন্সী মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস  রেসপন্স’ প্রকল্পের প্যাকেজ ডাব্লু ডি-০১ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের আওতাধীন বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকার নিয়োগ সম্বলিত প্রস্তাবটি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভায় বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য আগামী সপ্তাহে উপস্থাপন করা হবে।

ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ার সচিব মোঃ শাহ কামাল স্বাক্ষরিত এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২৫ আগষ্ট ২০১৭-এর পর প্রায় সাত লক্ষাধিক বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। এসব রোহিঙ্গা তরুণ ও তরুণীরা বর্তমানে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাথ উপজেলায় স্থাপিত কুতুপালং এবং নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করছে। উক্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক তরুণ রয়েছে। এর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার হবে, যাদেরকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত না করলে সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড যেমন- মাদক, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

সেই সব তরুণ-তরুণীদের উৎপাদনশীল কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ক্যাম্পের মৌলিক সুবিধাদির উন্নয়ন করা, সামাজিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও উদ্বুদ্বকরণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এ প্রকল্পটি প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়।

প্রস্তাবটিতে আরও বলা হয়, খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রকল্পের উপভোগকারীদের কাজের বিনিময়ে অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ প্রদানের বিষয়ে সরকারি সিদ্বান্তে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তরুণ রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ প্রদান করা হলে তারা নানাধরনের নেশায় জড়িয়ে পড়তে পারে। এ জন্য সরকার রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ প্রদানে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা কক্সবাজারে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোর রোহিঙ্গাদের ই-ভাউচারের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে থাকে।  

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাম্পের ভূমি ক্ষয় রোধে ৯০ হেক্টর জমিতে দেশি প্রজাতির ঘাস রোপন ও সংরক্ষণে সহায়তার কাজে, ক্যাম্পের পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে ৬ কিঃ মিঃ রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সহায়তার কাজে, ভূমিধস, বন্যা এবং ভূক্ষয় রোধে, ২.৪ কিলোমিটার পায়ে চলার পথ ও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ, পুনর্বাসন, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। 

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি বিগত ৭ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরে ৯ জুন ২০১৯ তারিখে বিশ্ব ব্যাংক উক্ত প্রকল্পটি  কার্যকর করে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে এআরএসএ (আরসা) বাহিনী মিয়ানমারে ৩০টি সেনা ক্যাম্পে একযোগে হামলা চালালে ১২ জন সেনা মারা যায়। এরপরই দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশের সীমান্তে ঠেলে দেয়। 

এসময় ১০ দিনের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক কক্সবাজারের উখিয়ায় ও টেকনাফে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের বদৌলতে বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে পরিণত হয়েছে। তবে সেখানে তারা নিজেদের মধ্যেই নয়, প্রায়ই ছোট-খাটো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গেও।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি