মাদক, সন্ত্রাস দূর করতে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ২০:০২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চা দেশের উন্নয়নে অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যতবেশি এর চর্চা করবো ততই তরুণ ও যুব সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে আরো উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিযে নিয়ে যেতে চাই এবং আমি মনেকরি আমাদের তরুন ও যুব সমাজকে খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় অধিকহারে সম্পৃক্ত করতে পারাটা এই লক্ষ্য অর্জনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’
আজ বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সারাদেশে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মাসব্যাপী নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ একটি পরিবার ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবসমাজকে যদি আমরা সঠিক পথে নিয়ে আসতে চাই তাহলে খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যতবেশি আমরা তাঁদের সম্পৃক্ত করতে পারবো, ততই তাঁদেরকে আমরা সুপথে আনতে পারবো। তাছাড়া সংস্কৃতির বিকাশ একটি জাতির বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যদিয়েই কিন্তু একটি জাতির স্বকীয়তা তুলে ধরা, প্রকাশ ও প্রচার করা যায়।’
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সহযোগিতায় প্রায় ৪শ’ নাট্য দলের অংশগ্রহণে সারাদেশের ৬৪ জেলায় এই মাসব্যাপী ‘জাতীয় নাট্যোৎসব-২০২০’র আয়োজন করেছে।
মুজিব বর্ষের প্রাক্কালে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের এই মাসবাপী নাট্যেৎসবকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি এরমধ্য দিয়ে আমরা বক্তৃতা করে যা বলতে না পারবো বা যতটা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবো, তারচেয়ে অনেক বেশি আপনারা সংস্কৃতিকর্মীরা এই নাট্যোৎসবের মধ্যদিয়ে পৌঁছতে পারবেন।’
তিনি এসময় শিক্ষা জীবনে ‘নুরুলদিনের সারাজীবন’ এবং ‘নীলদর্পণ নাটক’ এসে মঞ্চে দেখার স্মৃতি চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘নুরুলদিনের সারাজীবন’ নাটকটি শিক্ষা জীবনে কাউকে কিছু না বলে মহিলা সমিতি নাট্যমঞ্চে এসে একাধিকবার দেখার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি দুই-তিনবারই দেখেছি। আর যতবার দেখেছি আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’
তিনি বলেন,‘নীল দর্পণ’ নাটকের মধ্যদিয়ে জমিদাররা যে কিভাবে প্রজাদের নির্যাতন করতো তা তুলে ধরা হয়।’
এর আগে ঢাকা, সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘নুরুলদিনের সারাজীবন’ সহ বেশ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত নাটক উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বাংলাদেশ গ্রপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি এবং শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী সহ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দও গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতি যখন সংস্কৃতিচর্চা করতে পারে এবং শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত হতে পারে, তখন সে জাতির মর্যাদা বিশ্ববাসীর কাছে বাড়ে। তিনি বলেন, নাটক, কবিতা ও সাহিত্য এমন একটা মাধ্যম যে আমরা যেখানে মিটিং মিছিল করতে পারি না। বক্তব্য দিতে পারি না, নাটকের মাধ্যমে কিন্তু না বলা সেই কথাগুলো সেখানে বলা যায়। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন তার প্রমাণ।
তিনি বলেন, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সংস্কৃতি কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী ও সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে সংস্কৃতি কর্মীরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। ফলে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর শিল্পী-সাহিত্যিকরাই প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি পঁচাত্তরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের পর নির্মলেন্দু গুণের যে কবিতাটা সেই কবিতাটা যেন শুধু ৭ মার্চের ভাষণের কথা না, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছিল।’ বঙ্গবন্ধু কন্যা, ‘জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর কবি-সাহিত্যিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে একদিকে জাতির পিতার হত্যার প্রতিবাদ ও অন্যদিকে জাতির পিতার অবদানের কথা নির্ভয়ে তুলে ধরেছিলেন।
তিনি বলেন,‘তখনকার সময় যখন কেউ কথা বলার সাহস পায়নি তখন আমাদের কবি, শিল্পী-সাহিত্যিকরা এসেছিলেন এগিয়ে। তারাই কিন্তু কবিতার মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছিলেন একদিকে প্রতিবাদের ভাষা, অপরদিকে জাতির পিতার যে অবদান, সেই ‘৭৫’এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা নাটকের উপর অনেক ধরনের কালাকানুন জারি করেছিল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘ সেই কালাকানুনগুলো ছিয়ানব্বই সালে সরকারে এসে আমরা তুলে নিই। সবাই যেন স্বাধীনভাবে নাটক করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। নাটকের ওপর যে সেন্সর করা হতো, সেই সেন্সর প্রথাটা সম্পূর্ণ তুলে দিয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘নাটক তার স্বাধীন সত্তা নিয়ে চলবে সেজন্যই আমরা এটা তুলে দেই। আজকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলায় এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যেন এই শিল্পের চর্চা হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
এসি
আরও পড়ুন