ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

যারা ইংরেজী উচ্চারণে বাংলা বলে তাদের প্রতি করুণা: প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৪০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যারা ইংরেজী উচ্চারণে বাংলা বলে তাদের প্রতি করুণা: প্রধানমন্ত্রী

যারা ইংরেজী উচ্চারণে বাংলা বলে তাদের প্রতি করুণা: প্রধানমন্ত্রী

শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যারা এদেশে জন্মেও ইংরেজী উচ্চারণে বাংলা বলে তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে থেকে যারা বাংলা ভাষা ভুলে গিয়ে বাংলা ভাষার মতো বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজী অ্যাকসেন্টে কথা বলে, তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী তার নিজ দেশের নিজ গ্রামের মানুষের মতো কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বলেও উল্লেখ করেন।

আজ (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অমর একুশে ফেব্রুয়ারী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ছেলে-মেয়ে বাংলা ভাষায় কথা বা নিজের এলাকার কথা বলাটা (আঞ্চলিক ভাষা) ভুলে গিয়ে কেমন যেন ইংরেজী অ্যাকসেন্টে বাংলা বলার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে, বাংলা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যারা এই দেশেই লেখাপড়া শিখেছে।’

তিনি এ সময় ’৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে সমগ্র জাতির মতো তাদের ব্যক্তি জীবনের দুর্ভাগ্য উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর দেশে আসতে না পারায় তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদেশে থেকে বিদেশের স্কুলে পড়তে হলেও তারা দুই বোন (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) সবসময় চেষ্টা করেছেন তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন সঠিকভাবে বাংলা বলতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও রেহানা সবসময়ই ছেলে-মেয়েদের বাংলা শেখাবার চেষ্টা করেছি এবং ঘরে বাংলায় কথা বলেছি। কারণ বাংলা ভাষাটা শিখতে হবে।’

নিজেও ভালোভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার ভাষা মিলিয়েই কথা বলে থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু ছোটবেলায় ঢাকায় চলে এসেছি। সেই ভাষার একটা প্রভাব, আর টুঙ্গীপাড়ায় জন্মেছি তার একটা প্রভাব-সব মিলিয়েই বলি, যার মধ্যে কোনও লজ্জা নেই।’

বন্ধবন্ধু কন্যা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জাতির পিতা সেই ভাষণে গোপালগঞ্জের শব্দ বলে গেছেন অকাতরে যা মানুষের ভেতর একটা আবেদন সৃষ্টি করেছিল।’

‘জাতির পিতা দ্রুত মানুষের হৃদয়ে, মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। মানুষের কথা বলতে পেরেছিলেন। সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা কিন্তু গ্রহণ করেছে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটে একটি ট্রাষ্ট ফান্ড গঠন করে সেখান থেকে ফেলোশিপ প্রদানেও তার সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। যাতে সরকার পরিবর্তন হলেও এটি আর কেউ বন্ধ করতে না পারে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং হেড অব দ্য অফিস এন্ড ইউনেস্কো রিপ্রেজেন্টেটিভ মিজ বিয়ট্রিজ কালডুন বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং আন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

আন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিশ্বের সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহন করায় বিভিন্ন দেশের কোমলমতি শিশুরা নিজস্ব মাতৃভাষায় অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক এবং মিশন প্রধানসহ উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ,একুশে পদক বিজয়ী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সমবেত কন্ঠে সকলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয় এবং এরপরই অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি বাজানো হয়। শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটে পৌঁছেইএর সম্মুখ দেওয়ালে জাতির পিতার একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইমেন্ট অফিসার আরিফুজ্জামান নূরুন্নবী যার ভাস্কর।

এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালায় (ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেট-আইপিএ) লিপান্তর এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণ ইশারা ভাষায় ও ব্রেইল লিখন-বিধিতে প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানের শেষে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিউট ভবনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির কার্যালয় পরিদর্শন করেন। -বাসস।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি